
বেকার প্রেমিকের পাশে সব মেয়ে থাকতে চায় না, আর যারা থাকে তারা সাধারণ হয় না। যারা থেকে যায়, বেকারত্বের অবসান হলে তার জন্য পৃথিবীর সকলসুখ যেন পায়ের নিচে নিয়ে আসা যায়। প্রেমিকা বাহ্যিক দিক থেকে অসুন্দর হোক সুন্দর....মনের মিল হলে....অসুন্দর এর খুঁতগুলিকেও মনে হয় বড় আপন-তার হাল্কা হয়ে যাওয়া সামনের দিকের চুল.... অনিটোল শরীর....ঠোঁটের উপরের পুরু রোম....গালের উপরে জেগে ওঠা টসটসে ব্রণ.... বা গভীর জরুল......বোধহয় খুঁত গুলির জন্যই তাকে আরো বেশি ভালোবাসতে ইচ্ছা হয়.....ইচ্ছা হয়....অভিমানের চোটে অজস্র কুকথা বলে ফেলার পর অনুতাপে মাটিতে মিশে যেতে......পদচুম্বন করে বলতে....... "স্মরগরল খন্ডনম, মম শিরসী মন্তলম/ দেহি পদপল্লব মুদরম”(তোমার গরল নাশকারী চরণপদ্ম আমার মাথায় দাও/আমার দেহ মনের বিরহ শীতল হোক)
মানুষকে চেনা কিন্তু সহজ নয়। মানুষ শত ক্রোশ দূরে থেকেও পাশে থাকে, আবার হাতে হাত রেখেও বিশ্বাস ভাঙে। মানুষ গভীর ভালোবাসাও গোপন রাখে, আবার প্রতারণার ইচ্ছা নিয়েও অকপটে বলে দেয় 'ভালোবাসি!' মানুষ থাকবো বলেও হারিয়ে যায়, 'চলে যাচ্ছি' বলেও বারবার পিছু ফিরে তাকায়। কেউ কেউ আলোর পাশাপাশি অন্ধকার পাশে থাকে, কেউ আবার ভালো থাকা কেড়ে নিয়ে লিখে।
কতোটা বিভোর হতে পারে উদাস আঙুল ,
সেই প্রথম অভিজ্ঞতা , সেই প্রথম ভুল ।
অথবা ভুলের নামে বেড়ে ওঠা সেই প্রেম ,
সেই পরিচয় , আমি তাকে নিসঙ্গতা বলি ।
হুমায়ূন আহমেদ স্যার বলতেন, পৃথিবী শূন্যস্থান পছন্দ করে না। তিনি বলতেন, কিছু না কিছু, কেউ না কেউ শূন্যস্থান পূর্ণ করে দেয় কিংবা দ-খল করে নেয়। আমার মতে কথাটা সত্য না। কিছু শূন্যস্থান আজীবন শূন্যই রয়ে যায়। পুরো একটা পৃথিবী ঢেলে দিলেও সেসব শূন্যস্থান আর পূর্ণ হয় না। কিছুতেই হয় না, কোনোদিন হয় না!

আমি আমারে কোনোদিন'ও দেখি নাই
আমি যারে দেখি সেটা আমি না
সমাজ, ছবি, আয়না আমারে যা দেখায়
সেটাও আমি না ।
এই যে হাড্ডি, মাংসের কলকব্জা
যারে সচল রাখার জন্য জন্মের পর থেকে
বায়ু, খাবার, সুখ, আরাম দিয়ে যাই
সেটা আমি না ।
মূলত আমারে চালু রাখার জন্য শরীর নামের
একটা চাদর দেওয়া হয়েছে
এই চাদরের ভেতর এক অচেনা মহাজন আছেন
যে প্রতিনিয়ত কথা বলে, বলতেই থাকে, বলতেই থাকে, ভাবে,
সেটাই খুব সম্ভবত আমি ।
আমারে দেখা যায় না, ধরা যায় না, ছোঁয়া যায় না,
আমারে শুধু অনুভব করা যায়
ভীষণ কষ্টে থাকলে কিংবা অনেক আনন্দ পেলে
বেশি বেশি অনুভব করা যায় ।
আমার আদতে কোনো অস্তিত্বই নাই, নাম নাই, ঘর নাই,
শুরু'ও নাই শেষ'ও নাই ।
আমি আমারে কোনোদিন'ও দেখি নাই ।
তোমারে একনজর দেখার জন্য আমি
কতবার ছুটে যাই এই শহরের এমাথা থেকে ওমাথা
প্রতিবার ভাবি, এবার শহরের সবচেয়ে তাজা
আর সুন্দর ফুলগুলো তোমারে দেবো
কিশোরদের মতন সামনে দাঁড়ায়ে
হাত পেছনে রাখবো, যেনো ফুল দেখা না যায়
সেদিন তুমি একটা পাতলা সাদা-লাল শাড়ী পরবা
রিকশা থেকে নেমে হেঁটে আমার দিকে আসবা
আমারে দেখে একটা মুচকি হাসি দিবা
আমি মুহুর্তেই ভুলে যাবো দিনদুনিয়া
অজস্র মানুষের ভীড়ে চারিপাশ ঝাপসা
খালি তোমার চেহারা টা পরিষ্কার দেখা যাবে
আমি কাঁপা কাঁপা হাতে ফুলগুলো সামনে আনবো
চোখে রাজ্যের সমস্ত ভালোবাসা নিয়ে
মনে মনে আবদারের স্বরে বলবো
আমারে নিবা না জানি, অন্তত ফুলগুলো নাও !
খুব করে বলবো, অধিকার দাও
অথচ তোমারে এখনো ফুল'ই দেওয়া হলো না
তোমারে আমার অনেক কিছু দেওয়ার বাকি ।

একটা বয়সের পর ঠুনকো কোনোকিছুই আর ভালো লাগে না ।
ঠুনকো মায়া, ঠুনকো বন্ধুত্ব, ঠুনকো সম্পর্ক । নিজের অজান্তেই এসব থেকে ধীরে ধীরে নিজেকে গুটিয়ে নেয় মানুষ ।
ঠুনকো জিনিসে আনন্দ বেশি থাকলেও দিনশেষে সবাই টেকসই কিছু খুঁজে ।
মানুষ নিরাপত্তার গোলাম ।
স্থায়ী মায়ার ফাঁদে আটকে থাকতে ভালোবাসে ।
স্থায়ী বন্ধুত্ব, প্রেম, সম্পর্কে থেকে মানুষ নিরাপদ বোধ করে ।
বাবা মায়ের আশেপাশে থাকলে যেমন বোধ করে ঠিক তেমন ।
জীবনে প্রচুর মানুষের প্রয়োজন নেই । ভালো হলে অল্পেই তৃপ্তি ।
অরনী,
আমি তোমাকে আমার ভালো না লাগার কথা
বুঝাতে থাকি, অর্থাৎ আমি চাই তুমি খোঁপা বেধে,
শাড়ি পরা ছবি দিয়ে আমাকে চমকে দাও;
আনকোরা গলায় শুনিয়ে দাও মিষ্টি সুরের একটা গান অথবা
একটা প্রেমের কবিতা।
আমি যখন যাবতীয় সব অশান্তির কথা তোমার কাছে বলি,
আমি আসলে চাই তোমার বুকের ওম;
তোমার শান্ত চোখদুটো দিয়ে আমাকে বিছিয়ে দিবে
শীতল পাটি।
আমি যখন বলতে থাকি নিজের
এলোমেলো চুলের কথা,জীবনের কথা, মানিব্যাগের কথা,
আমি আসলে তোমাকে অনুরোধ করি আমাকে গুছিয়ে রাখার জন্যে;
ছোটবেলায় মা যেভাবে স্কুল যাওয়ার আগে
চুল আঁচড়ে দিতো
কিংবা কোনো পটু গৃহিনী যেমন
আঁচল বেধে কোমড়ে আটকে রাখে সংসার।
অরনী! তুমি কাধে মাথা রাখলে
নিজেকে ঐশ্বরিক ক্ষমতাধর মনে হয়।
কী অবলীলায় কাধে ধারণ করে আছি গোটা একটা পৃথিবী!
ঈশ্বর আমাকে ক্ষমতা দিক
তোমার মনের পাথর ভাঙার;
নাহয় নিজেই বানিয়ে দিক ঝর্ণা।
অরনী তোমাকে এভাবে বিষণ্ণ দেখলে
শুকিয়ে যেতে থাকে
আস্ত একটা ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট।
মেলায় সুতো ছিড়ে উড়তে থাকা একলা বেলুনটার মতো অসহায় লাগে
বড় দুঃখ লাগে পছন্দের খেলনা কিনতে না পারা ছোটবেলার মতো।
কমদামে মূলানো খেলনা পিস্তল টা এখন তাক করে আছে জীবন হয়ে
গড়পরতা জীবনের বাঁকে বাঁকে ম্যাজিকবলের মত চমকে দিচ্ছে ট্রাজেডি।
প্রেমিকার ভালোবাসা ঝুলে আছে রংবেরঙের কানের দুল; কাচের চুড়ি;মাথার কাঁটা হয়ে - চড়াদামে!
দুঃখের কাছে ঋণগ্রস্থ এক চাষী আমি;
সময়মতো পরিশোধ করতে না পারায়
খোয়া গ্যাছে সব সুদিন।
এমন নয় যে আমার শীতলতা নেই
আমিও বুকের ভাজে লুকিয়ে রাখি
সাইবেরিয়ান কোনো অঞ্চল।
কিন্তু ভালোবাসা তো কনকনে ঠান্ডায়
জড়িয়ে থাকা চাদর,
তাই তোমার জন্য সময় থমকিয়ে রাখি
একটা নাতিশীতোষ্ণ ঋতুতে।
ফুলের বুক পুড়লে সুবাস
মানুষের পুড়লে বিরহ।
পরস্পর কি জানে কার ব্যাথা কতবড়?

তুমি দেইখা নিও, মিলাইয়া নিও,একদিন আমারে তোমার খুব কইরা মনে পড়বো।মন পুড়বো মনে পইড়া। তুমি চইলা যাওনের পর আমারে যেমন কইরা কামড়ে ধরে স্মৃতির পোকায়, তেমন কইরা স্মৃতি পোকায় তোমারেও কামড়ে মাইরবো, কামড়ে ধইবো আত্মার অলিগলি, মেঠোপথ। তুমি দেইখা নিও,মিলাইয়া নিও– একদিন আমারে তোমার খুব কইরা দেখবার মন চাইবো! হেইদিন তামাম দুইন্না খুইজাও আমারে পাইবা না,দেখবার পারবা না।যেমন কইরা তোমারে না দেইখবার না পাইয়া অসুখে ছটফট করছি,পানির মাছ ডাঙা পাওনের মতান। তেমন কইরা ছটফট করবা! যেমন কইরা পরাণ পাখি উড়ুউড়ু কইরা উড়াইয়া নিছে আমারে,তোমারেও উড়াইয়া নিবো আমারে না দেখবার অসুখ।
তুমি দেইখা নিও, একদিন আমার লাইগা তোমার বুকখানি তোমার লাইগাই অভিযোগ আইবো। ক্যান ছ্যাইড়া গ্যালা?ক্যান ধইরা রাখাবার পথ গুছাইয়া নষ্ট করলা নিজের জমিন।
তোমার চাইরটা পাশ সুখে গুমগুম কইবো, তবুও তুমি সুখে নাই! এইডা শুধু তুমিই টের পাইবা! কান্না আইবো কানবার পারবা না জবাবদিহিতায়। তোমার নাই হইয়া যাওন যেমন কইরা আমার যুদ্ধের ময়দানে গুলিবিদ্ধ বুক! একদিন আমার নাই হওন, তোমারও হইবো এমন একটা অসুখ।
সম্পর্কগুলো জ্বরের মতো । একটা ঘোর ।
পাশে এসে বসা, কপাল ছুঁয়ে অনুমান, একশো তিন? উহু,
একশো চার!
চোখের ওপর ঠান্ডা হাত, জলপট্টি তারপর ঘেমে নেয়ে
একাকার ।
জ্বর ছেড়ে গেলে পাশের মানুষটাও কি চলে যায়?
কোথায় যায়? সমুদ্রের দিকে, হয়তো!
আমরা স্বভাবে সামুদ্রিক, আমাদের প্রত্যেকের কাছে একটা করে
পালতোলা নৌকো আর একফালি বিচ্ছিন দ্বীপ আছে।
তোমার দ্বীপে আমার নৌকো ভিড়লে ঢেউ বাড়ে, তারপর
ঝড়বৃষ্টি, বেপরোয়া অস্থিরতা, আস্তেধীরে সামলে নেয়া, যতটুকু
নেয়া যায়।
আমাদের সারেগামা আমরা নিজেরাই বুঝিনা -
আমাদের দুঃখগুলো খয়েরি রঙের -
আমাদের দেখাসাক্ষাৎ সাদাকালো সিনেমার গান।

আমাকে শিখিয়েছিলো,
যে কলম আমাকে অশিক্ষা দিয়েছিলো,
যে নারী আমাকে আঁচলে লুকিয়েছিলো,
যে নারী আমাকে বারিষে বের করে দিয়েছিলো,
যে পুরুষ আমাকে বুকে আগলেছিলো,
যে নারী আমাকে উপভোগ করেছিলো,
যে রাষ্ট্র আমাকে অধিকার যুগিয়েছিলো,
যে রাষ্ট্র আমাকে বিকিয়ে দিয়েছিলো,
যে শিক্ষা আমাকে সত্য চিনিয়েছিলো,
যে শিক্ষা আমাকে দাস বানিয়েছিলো,
যে সঙ্গম আমাকে সুখ দিয়েছিলো,
যে সঙ্গম আমাকে পণ্য করেছিলো,
যে পথ আমাকে আলোয় নিয়েছিলো,
যে পথ আমাকে আঁধারে ঠেলেছিলো,
যে হাসি আমাকে সাহস যুগিয়েছিলো,
যে হাসি আমাকে তাচ্ছিল্য করেছিলো,
যে ঘৃণা আমাকে জেদি বানিয়েছিলো,
যে ঘৃণা আমাকে হীনম্মন্য করেছিলো,
যে আঙুল আমাকে দিশা দিয়েছিলো,
যে আঙুল আমাকে শাসিয়েছিলো,
যে কান্না আমাকে দুঃখ চিনিয়েছিলো,
যে কান্না আমাকে প্রতারিত করেছিলো,
যে পোশাক আমাকে স্বেচ্ছা শিখিয়েছিলো,
যে পোশাক আমাকে পরেচ্ছাধীন করেছিলো,
যে আহার আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছিলো,
যে আহার আমাকে পীড়িত বানিয়েছিলো,
যে দুঃখ আমাকে জাগিয়ে দিয়েছিলো,
যে দুঃখ আমাকে ফুরিয়ে দিয়েছিলো,
যে মানুষ আমাকে মানুষ ভেবেছিলো,
যে মানুষ আমাকে খারিজ করেছিলো,
যে পশু আমাকে মনুষ্যত্ব শিখিয়েছিলো,
যে পশু আমাকে লজ্জা দিয়েছিলো,
যে সময় আমাকে তৈরি করেছিলো,
যে সময় আমাকে ধ্বংস করেছিলো-
সবাইকে ধন্যবাদ।
তোমাদের কাউকে ছাড়াই, আমি সত্য হতে পারতাম না।