
প্লেগ থেকে পালানো এক লোকের মতো, এখন আমি আবার বলছি
আমি আমার বন্ধুদের কাছে যাই; অনেককেই চিনি যারা রক্ষা পেয়েছিল
(সর্বদাই কিছু প্রস্থান থাকে), যেটা একসময় আমি বলেছিলাম
আবার আরেকবার একটা অজানা অসুস্থ্যতার কথা আমি বলেছিলাম –কে তা মনে রাখে?
তারা চলে গেছে, আর এখন, মৃত্যুর দিন, জানালাগুলো খোলা
ঝাড়ুদার খুশিমনে রাস্তার আবর্জনা ঝাড়ছে
আবার জেগে উঠছে জীবন, ক্লাব আর ইনস্টিটিউটগুলোতে শুরু হয়েছে রেজিস্ট্রেশন
তরুণ তরুণীরা জড়াজড়ি করে বসছে পার্কে, সিনেমা হলগুলোতে ছবি চলছে উরাধুরা
খবরের কাগজে বিজ্ঞাপন; শয়তানের মত্তলীলা এখন আর নাই
মুখোশগুলো পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে, পুরানো নাম হয়েছে বিস্মৃত
আর গণ-পরিষদ রাস্তাগুলোর আবার নামকরণের শুনানি বসিয়েছে।
তোমার সম্পর্কে আমি আবার ভাবছি।
আলাপ করতে, জিনিসগুলোর অন্যদিক দেখতে,
নীরব হ’তে জানতে, বিচক্ষণ হ’তে কীভাবে তোমার হাতে সময় ছিল না;
সম্ভাব্যতার কথা বলতে, উপসংহার টানতে এগুলো তোমার ভবিষ্যতের মাঝে ছিল না
ধারণার পাটিগণিত শেখাতে, এগুলো তোমার জন্য তোমার ভবিষ্যতেও ছিল না।

এই শহরটা ভাঙচুর করে ভালোবেসেছি তোমাকে-
পাড়ায় পাড়ায় আগুন জ্বালিয়ে
ছাই নিয়ে আসি হাতে-
তোমার দিকে ইশারা করে উড়িয়ে দেই ।
যে তুমি আমার দেবী হতে চাইতে-
বারংবার সতর্কবাণী উপেক্ষা করেই দেবীর বরণ দিয়েছি...
আমি এতোটাও ধ্বংসাত্মক ছিলাম না,
আমি ছিলাম নিরীহ, উত্তেজিত হৃদরোগে আক্রান্ত রোগী-
তুমি ছুঁয়ে গেলেই টের পাই,
আমার ব্লাড প্রেশার হাজার পেরিয়ে আকাশ ছুঁয়েছে !
তবু ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেতে জাহাজ ভাসিয়ে দিই
তোমার বুকের গহীনে,
যেখানে উত্তাল ভূমধ্যসাগর ভেবে খেলা করে
অপূর্ব ভয়ানক শারীরিক ঢেউ ।
ধীরে ধীরে আমি সাহসী হই-
তোমার চোখে চোখ রেখে ভালোবাসতে শিখি ।
তোমার জ্বলজ্বল চোখে আগুন দেখতে পাই রাতে,
আমি জানতাম, এই আগুন আমায় আজীবন পোড়াবে-
তোমায় যেদিন ছুঁয়েছি,
সেদিনই বুঝেছি এ রক্ত-মাংসের দেবী নয়,
এ আমার ঘুমন্ত ভিসুভিয়াস, চুপচাপ আগ্নেয়গিরি !
যার সোনালি চুলের শীর্ষবিন্দুতে
আগুনের লেলিহান শিখা ।
তবু সারাদিনের কর্মব্যস্ততা শেষে যখন ঘরে ফিরি-
নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও ঝাপ দিই আগুনে,
প্রতিবার একই নিয়মে নিহত হই,
অজস্র চুমুর বিস্ফোরণে-
আমার শরীরটা হয়ে যায় বিধ্বস্ত হিরোশিমা ।
ঘুম ঘুম চোখে তোমাকে নিভু নিভু আগুনের মতো লাগে-
দেবী,
তোমায় বানিয়ে চিতা, এই আগুনেই পুড়ে মরি ...
সম্পর্ক ভাঙ্গার কারন খোঁজ করার প্রয়োজন নেই। বিষ্ণু পুরাণে পড়েছিলাম, আকাঙ্খা- প্রাপ্তির মোহ মায়ায় আটকে গঙ্গা এবং সরস্বতী দেবীও স্বয়ং শ্রী বিষ্ণু থেকে বিচ্ছেদ হয়েছিলো।

আমি প্রথম যেদিন শুনেছি-
তোমার পারিবারিক মানপত্রে আমার নামটা বেমানান,
সেদিন সে মুহূর্ত থেকে তোমাকে আর ভালোবাসি নি ।
আমি তবু কিছুদিন তোমার পাশে হেঁটেছি-
হুট করে ছেড়ে দেবার আগে,
একা হেঁটে যাওয়া শিখিয়েছি,
তারপর বেমালুম ছাড়িয়ে নিয়ে গেছি আমার আঙুল,
আড়াই কোটি মানুষের শহরে তুমি বুঝতেও পারো নি,
একটা মানুষ হারিয়ে গেছে ভিড়ে !
তুমি যেদিন বুঝতে পারবে আমি তোমার পাশে নেই-
সেদিন তোমার একটা মধ্যবয়স্ক সংসার থাকবে,
ভিনদেশী সিটিজেনের উচ্চবিত্ত মানপত্রে
যে আপোষ তুমি করেছ,
সেখানে পাপোষ হবে তোমার প্রেম ।
যেদিন দেখবে গোসল ফেরত সদ্য ভেজা চুলে
কোন কাতর প্রেমিক ঘ্রান শুঁকতে বসেনি,
সেদিন হঠাৎ তোমার মনে হবে-
১৭ টা বছর কেটে গেছে !
১৭ বছর পরে যেদিন আমার কথা মনে হবে-
ততদিনে আমাদের সবকটা স্মৃতি বিলীন হয়ে গেছে !
বেইলি রোডের ভেলপুরিকে দখল করে নিবে মেক্সিকান প্ল্যাটার-
আমাদের চড়ে বেড়ানো রিক্সাকে নিষিদ্ধ করা হবে,
শান্তিনগরের রাজপথে ।
এমনকি ১৭ বছর শেষে-
যেদিন আমাকে তোমার মনে পরবে বার বার,
সেদিন তোমাকে আর মনেও পরবে না আমার !

"উদ্দেশ্য নয় আজন্ম হাতে রাখা হাত,
প্রেমিক চাইছে বুকের মাংস,প্রেমিকা চাইছে মগজের স্বাদ"
নিঃস্বার্থে কেউ কখনো কারো জন্যে যেকোন সম্পর্কে কোন কিছু করেনা। সকল কিছুতেই চাওয়া পাওয়া আছে, পার্থক্য শুধু কেউ সাধকের মত চায় আর কেউ রাক্ষসের মত চায়। মানুষের নিজস্ব কোন স্বয়ীকতা নেই। চল্লিশোর্ধ দম্পতির মিলনে সুখ খুঁজে না পেলেও বিশাল প্রাপ্তির আকাঙ্খা থাকে, যৌবনে দুটোই সময়ক্রমে চলতে থাকে। আকাঙ্খার বাহিরে কেউ নেই.. এই আকাঙ্খা মুক্তির পথও কারো জানা নেই। মানুষই একমাত্র প্রানী; যে, প্রতারণা করতে জানে। সে প্রতারনা করে কিংবা প্রতারিত হয়েও পৃথিবীর বুকে চষে বেড়ায়। প্রতারকদের শাস্তি হয়না; কিংবা হয় - তবু, প্রতারকদের কোনদনিও আত্মোপলব্ধি আসেনা এবং এটাই প্রতারকদের সুখে থাকার একমাত্র চাবিকাঠি।
'কাম হইতে হয় প্রেমের উদয়
প্রেম হইলে কাম থাকেনা'
চাইতে হইলে সাধুর মত চাইতে হয়, রাক্ষসের মত নয়। আবার সমুদ্র মন্থনে অমৃতে রাক্ষস- দেবতা ভাগ এসে যায় বলেই সাধু কিন্তু সেই সাধুই রয়। দধীচি নিজের দেহ দিতে পারলেও ওই দেবী কিন্তু পূজার জন্য মানুষ মেরে ফেলে। সংসারে মানুষ হয়েতো জন্ম গ্রহন করেছি, শেষপর্যন্ত মানুষ হলাম কই?
নিঃস্বার্থে কেউ কখনো কারো জন্যে যেকোন সম্পর্কে কোন কিছু করেনা। সকল কিছুতেই চাওয়া পাওয়া আছে, পার্থক্য শুধু কেউ সাধকের মত চায় আর কেউ রাক্ষসের মত চায়। মানুষের নিজস্ব কোন স্বয়ীকতা নেই। চল্লিশোর্ধ দম্পতির মিলনে সুখ খুঁজে না পেলেও বিশাল প্রাপ্তির আকাঙ্খা থাকে, যৌবনে দুটোই সময়ক্রমে চলতে থাকে। আকাঙ্খার বাহিরে কেউ নেই.. এই আকাঙ্খা মুক্তির পথও কারো জানা নেই।
মানুষই একমাত্র প্রানী; যে, প্রতারণা করতে জানে। সে প্রতারনা করে কিংবা প্রতারিত হয়েও পৃথিবীর বুকে চষে বেড়ায়। প্রতারকদের শাস্তি হয়না; কিংবা হয় - তবু, প্রতারকদের কোনদনিও আত্মোপলব্ধি আসেনা এবং এটাই প্রতারকদের সুখে থাকার একমাত্র চাবিকাঠি।

এটুকু আমি শুনি, ভীষণ আমার
তবে এটা ঠিক যে, প্রেমে জীবনে ঐ একবারই পড়েছিলাম। আর হবে না। প্রেমের জন্য পরিবেশ চাই। প্রচুর বোকামি থাকা চাই। অনভিজ্ঞ হওয়া চাই। কলকাতাতে যেসব সম্পর্ক হয় ওগুলো কেনা-বেচার সম্পর্ক। কামের, ক্যারিয়ারের, সোস্যাল স্ট্যাটাসের; কন্ডিসনাল প্রেম সেসব; অধিকাংশই কনভিনিয়ন্সের প্রেম।
জীবন, পড়ালেখা- শেখা, এই চাকরি-খোঁজা, চাকরি-পাওয়া, চাকরি টিকিয়ে রাখা, উন্নতি-করা, বন্ধু-পাওয়া, ভালোবাসা, বিয়ে-করা, সংসার-করা, ছেলেমেয়ের জন্ম-দেওয়া, তারপর একদিন চোদ্দ বছর বয়সী, লোম-ওঠা অপক্ত কুকুরের মতো করুণার পাত্র-হওয়া, বুড়ো হওয়া; এই যুগ যুগ ধরে মেনে নেওয়া সুপ্রাচীন বস্তুটিকে কি কোনখানে নিয়ে গিয়ে নিরিবিলিতে টেনে-হিঁচড়ে দুমড়ে-মুচড়ে চতুষ্কোণ বা ত্রিকোণ বা অক্টাগোনাল করে দেয়া যায়না ? এতোদিনের সব মেনে-নেওয়া অভ্যেসকে লন্ডভণ্ড করে দিয়ে?
মানুষের অনিত্য অস্থায়ী জীবনে স্থায়ী ও নিত্য বলে যে কিছুমাত্র নেই এই কথা ভালো করে জেনেও মানুষ মস্তিষ্কর এই টাকে -চুল গজানোর ওষুধের বিজ্ঞাপনে চিরদিন বিশ্বাস করে এসেছে। আশ্চর্য !
এই মানুষকে বাঁচাবে কে? যদি নিজেই সে নিজেকে না বাঁচায় ?
জীবন থমেক যাওয়ার পর হাঁটেত হাঁটেত ভাবি স্বর্গে হাটার রাস্তা আছে কতটুকু?
গৌতম স্থির হলো বোধিবৃক্ষে, মুহম্মদ হেরায় কলিঙ্গে, অশোক জীবনানন্দ ধর্মতলায়
আর আমার অস্থিরতা যদি তুমি দেখতে!