শুকোতে দাও স্যাঁতস্যাঁতে এ জীবন

image

এইযে দেখো, ভাঙ্গাচোরা একটা মানুষকে একটা সময় পর্যন্ত হয়তো তোমার ভালো লেগেছিলো। তখন, হয়তো তোমার মাঝে ছিলো প্রেমিকার শীতল অনুভূতি। আজ যে নেই, তা বলছিনা। আজও, সবকিছু অক্ষুণ্ণই রয়েছে। শুধু, ভাঙ্গাচোরা মানুষকে গুছিয়ে নেবার সময়টা দিতে পারার মত; সেইরূপ ধৈর্য কি অনন্তকাল ধরে বইতে পারা যায় ?

যতটা পথ আমরা হেঁটে এসেছি, তার কোথাও না কোথাও তুমি দাঁড়িয়ে যেতে পারতে না কি ?

কতটা দোষ পেলে, একটা মানুষকে ছেড়ে দেয়া যায়? সত্যিই কি ছেঁড়ে দেয়া যায়?

সত্যিইকি, কোন দোষের জন্য ছেঁড়ে যাওয়া ?

আমি কখনো বিশ্বাস করিনা মানুষ জন্মদিন মনে রাখতে না পারার মত, কিংবা বৃষ্টিতে ভিজতে না পারার মত এইরকম গর্হিত দোষে কাউকে ছেড়ে যায় ?

কতটা নৈরাশাগ্রস্থ হলে মানুষ তার সবচেয়ে ভালবাসার মানুষটাকে বকতে পারে, তা কি তুমি জানো?

আচ্ছা, তুমি কি পারতে না- আর একটু আগুনে পুড়তে? হয়তো, পারতেনা। ভালোই করেছো, মাঝপথে ছেড়ে দিয়ে। এইযে দেখো, আমি আমার প্রাক্তন কে সময় দিতে পারতাম না। কোন, বিপরীত লিঙ্গের কারো সাথে কথা বলেছি নিয়ে সন্দেহ করে চলে গিয়েছিলো। আমার সেই সময়টা তাকে ইগ্নোর করা হয়েছিলো, সত্যিই। তারওতো, কিছু চাওয়া থাকতে পারে?

একই কাজ কি আমি তোমার সাথেও করেছি? হ্যাঁ, করেছি।

তুমি যতটা আওয়াজ করেছো, ততটাই যদি আমার জন্য থেকে যেতে! আজ, তুমি যে হারিয়ে গেছো! আমার ঘরে আজ চারিদিকে শুধু তুমি, তুমি রব উঠে।

যেটাকে তুমি জয় মনে করেছো, তুমি কি জানো- আমাকে হারাতে গিয়ে তুমিও কোথাও না কোথাও হেরেছো? যা কিছু সহজ, সত্য, সুন্দর তা হারানোটা বড্ড ভয়ঙ্কর।

খুব ভরসার কোন জায়গায় প্রতারণার গন্ধ পেলে; আমার ক্ষুধা লাগার মতন অনুভূতি হয়। মনে হয় বহুকাল অভুক্ত আছি। গা গুলায়। ইচ্ছে হয়- গলায় আঙুল দিয়ে বমি করে হালকা হই। জীবন খুব তুচ্ছ তুচ্ছ কারনে বদলে যায়।

দেখোনা, তোমার জন্য আমার এখনো এমন পুড়তেছে কেন?

জান্নাতুরের কবিতাংশঃ

তোমাকে অভিশাপ দিলাম তুমি কবি হবে!
তোমার দুঃখদের লোকে কবিতা নামে ডাকবে, ভালোবাসবে।
আজ থেকে শতবর্ষ পরে,
কোনো কপর্দকহীন যুবক তোমার অপ্রাপ্তির খাতা নিয়ে বসবে, করবে অঘোরে গবেষণা।
তোমার ব্যর্থ প্রেমের সব ইতিহাস নিয়ে মুখরোচক আলাপে মুখরিত হবে সাহিত্যপাড়া ছাড়িয়ে হাট-বাজার।
তোমার প্রেমপূজা যে প্রেমিকাদের চরণে করতে উৎসর্গ,
তাদের নামে পাঠ হবে নিন্দাবাক্য! হানা হবে অভিযোগের দেয়াল।
তোমার কবিতা পড়তে পড়তে কোনো অনিন্দ্য সুন্দরী রমণী তোমার জন্য আফসোসে বলে উঠবে "আহ"।
তোমার জীবৎকালে এমন রূপবতীদের তুমি কখনো ছুঁয়েও দেখতে পারো নি।
অভিশাপ দিলাম! অভিশাপ দিলাম তুমি কবি হবে!
তোমার ব্যক্তিগত ক্ষতদের তুমি নিজেই খুঁড়ে খুঁড়ে দহন নেবে।
যেন তোমার বোধ, তোমার বেদনা জলন্ত সিগারেটের মতো,
যেন জ্বলেই তার কর্ম নেভে।
তুমি উলূকের মত আলো দেখলেই চমকে উঠবে, মায়া দেখলেই তীব্র ভয় নিয়ে পালিয়ে যাবে।
নিঃসঙ্গতার গ্লানি নিয়ে তুমি প্রতিদিন একবার আত্মহুতি দিতে গিয়ে ফিরে আসবে।
লিখতে না পারার ভীষণ দাহে মৃত্যুর আগেই তোমার নিত্য হবে নরক দর্শন।
ঈশ্বর মুখ ফিরিয়ে নেবে তোমার দিক থেকে,
শয়তান তোমাকে দেখে দেবে করতালি।
আর মানুষ? কখনো শ্রদ্ধায় আনত হবে,
কখনো মমতায় হবে বিগলিত, দিনশেষে ছেড়ে যাবে তোমাকে পাঠ করবার একঘেয়েমি বিরক্তি নিয়ে।
তোমাকে অভিশাপ দিলাম তুমি মহান কবি হবে,
চিলের মত উড়বে একা ঊর্ধ্ব আকাশে।
সঙ্গিহীন শালিকের মত বসে থাকবে গ্রীষ্মের তীব্র তাপদাহে বিস্তীর্ণ ধানক্ষেতে।
কুয়াশার সকালে একটু ওমের জন্য খুঁজবে প্রিয়তম বুক, অথচ পাবে না।
তোমার মা মুখ ফিরিয়ে নেবে, বোন করবে তিরস্কার, প্রেমিকা হাসবে বিদ্রূপের হাসি।
বন্ধু এড়িয়ে চলবে, তোমার এককালের পিছনের সারিতে বসা সহপাঠী রাস্তায় দেখা হলে
ভারী চশমার আড়াল থেকে তোমাকে চিনতে পারবে না।
তুমি চিৎকার করতে করতে লোকালয় ছেড়ে পালিয়ে যাবে, কেউ শুনতে পাবে না, কেউ দেখতে পাবে না।
কোনো এক মরানদীর পারে তোমার কবিতার খাতা পড়ে থাকবে।
হঠাৎ কোনো এক উজ্জ্বল ফেব্রুয়ারির দিনে ম্লান তোমার কবিতা পাঠ হবে মুক্তমঞ্চে।
তোমার বিবর্জিত নগরে তোমাকে নিয়ে হইচই পড়ে যাবে।
তোমাকে খুঁজতে দলে দলে বুদ্ধিজীবী ছুটে যাবে মরানদীর পারে।
অথচ ওরা কেউ তোমাকে খুঁজে পাবে না।
খুঁজে পাবে না তোমার নাম লেখা কোনো পুরনো কবর।
দিনের পর দিন তোমার করব খুঁজবে কোনো সুদর্শন তরুণ প্রভাষক,
তোমার কবর খুঁজে পেলেই যার হয়ে যাবে পদোন্নতি!
অথচ ওরা কেউ জানবে না তোমার নামে পৃথিবীতে কোনো কবর হবে না।
কারণ তুমি কখনো মরো নাই,
কারণ কবি কখনো মরে না।
কারণ কবির জীবন চির অভিশপ্ত, চির অশান্তির।
তোমাকে অভিশাপ দিলাম, প্রিয়তম তুমি কবি হবে!

এখন যে কটা দিন বাঁচি, সূর্যে সূর্যে হাঁটি।