খাঁ খাঁ বিরান, আমার কিছু নাই

image

আপনার থেকে তো আমি দয়া ভিক্ষে চাইনি ,ভীষ্ম!

আপনার থেকেও আমি সুরক্ষা চাইনি অর্জুন!

তবে কেন দুজন মিলে যুদ্ধের ভানে

আমার বীরত্বকে, আমার দক্ষতাকে, আমার প্রতিহিংসাবোধকে এমনভাবে অপমান করলেন?

কি চেয়েছিলাম আপনার কাছে , হে দেবাদিদেব?

যে দেবব্রত’র জন্য আমার গতজন্ম নিস্ফলা হয়েছে,

তাঁকে সম্মুখসমরে সংহার করতে চেয়েছিলাম।

বিনা অপরাধে আমার জীবন নরক করে দিয়ে ধিকি জ্বালানোর প্রতিশোধ চেয়েছিলাম আমি।

তার বদলে দিলেন ক্লীবের জীবন, একি বর না উপহাস, পিতঃ?

আসলে, আপনারা চিরকাল নারীকে পুরুষের অধীন চেয়েছেন,

বশংবদ আনুগত্যে যে মাথায় নেবে পুরুষের তাবত অন্যায়ের দায়ভার।

যেই নারী তার নিজস্ব অধিকার চেয়ে ,

স্বাধীন ইচ্ছার সম্মান চেয়ে,

নিজস্ব সোপান গড়তে চেয়েছে,

তখনই আপনারা দিয়েছেন, দিতে থাকবেন নরকযন্ত্রণা।

পুরুষ দেবব্রত অপহরণ করলেন অনিচ্ছায়

পুরুষ শাল্বরাজ প্রত্যাখ্যান করলেন অমর্যাদায়

পুরুষ পরশুরাম হাত গুটিয়ে নিলেন অপারগতায়

এবং এক পুরুষ ভগবান বরের অছিলায় দিলেন একটা গোটা জন্ম ক্লীবত্ব।

ভুলটা আমারই , এতদিনে বুঝলাম।

এই কুরুক্ষেত্রের ভীষণ যুদ্ধে যখন আমার সামনে দাঁড়িয়ে নিরস্ত্র ভীষ্ম,

অথচ আমার অক্ষম বাণগুলি তাঁর বর্ম থেকে নির্বিকার ধুলোর মতো ঝরে পড়ছে,

যখন আমার পেছন থেকে অর্জুনের দিব্যাস্ত্ররা ক্রমাণ্বয়ে রক্তাক্ত করছে তাঁরই পিতামহকে,

তখন আমি আমার ভ্রান্তি অনুধাবন করলাম।

আমার নারী হওয়া উচিৎ ছিলো ভগিনী যাজ্ঞসেনীর মতো।

শক্তিস্বরূপা নারী, যার ক্রোধে স্বয়ং ঈশ্বর কেঁপে ওঠেন,

স্থিতবুদ্ধি নারী, যার অঙ্গুলীহেলনে মহাযুদ্ধ বেঁধে যায় অনায়াসে,

সৃষ্টি ও লয়ের জন্মদাত্রী নারী, যার মান ও অপমানে পুরুষের অন্তিম লেখা,

সেই নারীজন্ম ছেড়ে আমি কেন যে মহাবল পুরুষ হতে চাইলাম!

সেই ভ্রান্তি উত্তরপ্রজন্মের কাছে আমার নামকে অনন্তকাল হাস্যাস্পদ করে দিলো,

শিখণ্ডী নয়, আমি আরেকবার অম্বা হতে চাই!