ও চিরপ্রণম্য অগ্নি

image

০১. তোমাকে দেখামাত্র চেঁচামেচি আরম্ভ করে দেবে স্ত্রী, কারণ বাইরে খেতে না-পেয়ে ঘরের মুড়ি-বিস্কুট-আচার সমস্ত খাবারের ডিব্বাই খুঁজেখুঁজে খালি করে দিচ্ছ তুমি।

০২. জগতের সবকিছুকেই তুমি টেনেটুনে আধ্যাত্মিক দিকে নিয়ে যাবে! "টাকাপয়সা আত্মার শান্তি বিনষ্ট করে", "টাকা হাতের ময়লা", "যতো টাকা ততো দোজখের সন্নিকট", এইসব আজগুবি কথাবার্তা বলতে থাকবে তুমি।

০৩. পারিবারিক বৈঠকে যখনই তুমি নিজের মতামত জানাতে চেষ্টা করবে, অমনি বাকি সবাই তোমার দিকে এমনভাবে তাকাবে, যেন তোমার কাজই হলো গুরুত্বপূর্ণ আলাপচারিতায় অকারণ কনফিউশন তৈরি করা।

০৪. যখনই তোমার প্রেমিক কিংবা প্রেমিকার পাশে থাকবে, যখনতখন ক্ষুধা লেগে যাবে তার, ফলে তুমি নিয়মিত পালাতে বাধ্য হবে অদ্ভুত সব অজুহাত দেখিয়ে। অতএব, তোমার প্রেম মূলত আর প্রেমই রইবে না, এ রূপান্তরিত হবে লুকোচুরি খেলায়, এবং এর সুযোগ নিয়ে ওই সম্পর্কটার মাঝখানে ঢুকে যাবো আমি।

০৫. তুমি কাউকে 'কেমন আছ' জিজ্ঞেস করলেই, তটস্থ হয়ে উঠবে সে- 'ব্যাটা নির্ঘাত ধার চেয়ে বসবে!'

০৬. তোমার জীবনের সমস্ত সমস্যাকেই তুমি আধ্যাত্মিক রূপ দিতে আরম্ভ করে দেবে এই বিখ্যাত উক্তির প্রলেপ দিয়ে- "সবই আল্লার ইচ্ছা।" এভাবে, একসময় নিজের কোনো অযোগ্যতাই তুমি খুঁজে পাবে না আর। অথচ, তুমি অযোগ্যতায় ভর্তি বিশাল একটা ভাণ্ড।

০৭. রাস্তায় পড়ে থাকা কোকের বোতলের ঢাকনা দেখলেই তোমার মনে হতে থাকবে- ওটা পাঁচ টাকার চকচকে কয়েন।

০৮. মেজাজ সবসময় খিটখিটে থাকবে তোমার, ঘুম কী দ্রব্য ভুলেই যাবে।

০৯. মাস্টারবেট করাকে তুমি জগতের শ্রেষ্ঠতম স্বাস্থ্যকর পদ্ধতি ভেবে নেবে।

১০. পরিবারে কখন কী ঘটছে তোমাকে জানানোর প্রয়োজন অনুভব করবে না কেউই।

১১. কাউকে খেতে দেখলেই, অবচেতনে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসবে তোমার বুক চিরে।

১২. নিয়মিত ডায়রিয়ায় ভুগবে তুমি, সাথে পরশ্রীকাতরতায়।

১৩. তোমার পরিচিত-অপরিচিত সবাই, নিয়মিত মুখস্থই বলতে থাকবে- "তুমি কখনোই সিরিয়াস ছিলে না।"

১৪. তোমার চারদিকে উপদেশের দোকান খুলে বসবে লোকে।

১৫. ফেসবুকে নিজেদের ছবি পোস্ট করার সময় এমনকি তোমার ফ্যামিলি-মেম্বাররাও তোমার মুখটা ক্রপ করে কেটে তারপর পোস্ট করবে। লল।

১৬. কথায়-কথায় তোমাকে দুনিয়ার যাবতীয় জন্তুর সাথে তুলনা করতে থাকবে সবাই।

১৭. পার্টি বা শেষকৃত্য বা বিবাহ অনুষ্ঠান, বা খৎনার প্রোগ্রাম শেষে, চেয়ারটেবিল ও শামিয়ানার খোলা পর্দাগুলো, সবসময় তোমার মাথার উপরেই শোভা পাবে।

১৮. উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা এবং অস্বাভাবিক পাগলামিছাগলামি নিত্যসঙ্গী হয়ে যাবে তোমার।

১৯. এককথায়- তুমি মরা।

২০. সফল সহপাঠী ও বাল্যসাথীদেরকে মোটেই সহ্য করতে পারবে না তুমি।

২১. দু'পয়সা উপার্জনের জন্য প্রচণ্ড পরিশ্রম করতে থাকা মানুষগুলোকে তুমি তাচ্ছিল্য করবে ইনফিরিয়োরিটি কমপ্লেক্স থেকে, এবং সুযোগ পেলে তাদের কাছেই হাত পেতে বসবে।

২২. তোমার বউকে বাকি সবাই নিজেদের বউ ভাববে।

২৩. তোমার জোকগুলো শুনে কেউ হাসবে তো না-ই, উল্টো নাক কুঁচকে বিরক্তি সহকারে বলবে- "ভাঁড়ামি করোস?"

২৪. ব্রেকফাস্ট ও লাঞ্চ আলাদা-আলাদা নির্দিষ্ট সময়ে করার বদলে, তুমি নিয়মিত করতে থাকবে ব্রেকাঞ্চ, দু'টো মিলে একবার, জলে বেলাবিস্কুট ডুবিয়ে।

২৫. সবসময়ই তোমাকে দোস্তোদের সাথে খেতে দেখা যাবে; না, তুমি সামাজিক বলে নয়, অন্যদের পকেট থেকে খাচ্ছ বলে।

২৬. একটা শিঙ্গাড়ার দামকে তোমার মনে হবে এক বস্তা সিমেন্টের দামের সমান।

২৭. জোয়ান বয়সেই তোমার সব চুল পেকে যাবে।

২৮. রাস্তা পার হওয়ার সময় এমনকি ছাল-ওঠা ছাগলটাও তোমার পথ আগলে দাঁড়িয়ে থাকবে।

২৯. দুনিয়ার কোথাও মশা না-থাকলেও তোমাকে ঠিকই মশায় কামড়াবে, কারণ তোমার কয়েল কেনার মুরোদ নেই।

৩০. আশেপাশের সব বাড়িতেই গ্যাস থাকবে, কিন্তু কোনো এক অজানা কারণে তোমার চুলায় প্রায়ই থাকবে না।

৩১. যে-খাবারেই কামড় দাও, ওটায় অবশ্যই একটা চুল বা দুইটা কাঁকড় পাবেই তুমি।

৩২. তোমার শরীর তোমারই থাকবে, কিন্তু মাথাটা হয়ে যাবে ভেড়ার, অন্যদের চোখে।

৩৩. তোমার ভাবনাচিন্তাগুলো হয়ে যাবে কোটিপতির মতো।

৩৪. প্রায়ই তোমার মনে হতে থাকবে- আজই হুট করে একটা টাকাভর্তি ব্যাগ পেয়ে যাচ্ছ; অথবা এটিএম মেশিন থেকে

ফরফরিয়ে টাকা বেরিয়ে আসছে তোমার সামনে; এবং আশেপাশে কেউই নেই!

৩৫. যখনতখন ক্ষিধে পাবে তোমার।

৩৬. টাকাওয়ালারা তোমার প্রেয়সীকে বিয়ে করে ফেলবে। আর তুমি প্রেয়সীর লোভের বৃত্তান্ত বিষয়ক কবিতা প্রসব করতে থাকবে।

৩৭. তুমি বলতে থাকবে- "টাকাপয়সা ফুটানি ছাড়া আর কিছুই না।'

৩৮. তুমি মাথা দুলিয়ে দর্শন আওড়াবে- "কী সুন্দর মেয়েটা বেড়াচ্ছে একটা হদ্দ বুড়ার সাথে! আহ্ টাকার লোভ!" অথচ, তোমার মুরোদ নেই মেয়েটির পাশে দাঁড়ানোর।

৩৯. তোমার মনে হবে সবাই তোমাকে ভালোবাসে, এবং তোমার মনে হবে কেউ তোমাকে ভালোবাসে না।

৪০. দুনিয়ার সমস্তকিছুই তোমার শত্রু হয়ে যাবে।

৪১. তোমার মাথাব্যথা করবে সিনার ভিতরে।

৪২. নিজেরটা মনে করে পাশের জনের মাথা চুলকাতে থাকবে, প্রায়ই।

৪৩. তুমি মরবে হার্ট-অ্যাটাকে। কিন্তু লোকে ভাববে আছাড় খেয়ে মরেছ। কারণ হার্ট-অ্যাটাক দামি অসুখ।

৪৪. বারোমাসেই তোমার জ্বরসর্দি লেগে থাকবে, কারণ ওষুধ কেনার পয়সা নাই তোমার।

৪৫. রাস্তার ভিখিরিটাও তোমাকে টিটকিরি মারবে, কারণ তার থালায় অন্তত তিনটা পয়সা আছে।

৪৬. তোমাকে বুড়া থেকে কিশোর, ল্যাঙড়া থেকে নপুংসক, সব পুরুষই বিছানায় যাওয়ার আহ্বান জানাবে ইঙ্গিতে আর সরাসরি।

৪৭. তুমি বলতে থাকবে- "টাকাপয়সা সমস্ত অপকর্মের মূল।"

৪৮. তোমার সব ভাবনাই হয়ে উঠবে নিগেটিভ।

৪৯. সিট থেকে যখনতখন দাঁড়িয়ে পড়বে তুমি, কারণ তোমার মনে হবে যার সাথে ওখানে গিয়েছ সে তোমাকে ফেলে চলে যাচ্ছে, অথচ সে যাচ্ছে পেশাব করতে। গাড়িভাড়া নেই বলেই তোমার এই মুহুর্মুহু তটস্থতা।

৫০. অকারণেই ঝগড়াফ্যাসাদ করবে তুমি।

৫১. এমনকি মাছি দেখেও ভয়ে আঁৎকে উঠবে তুমি।

৫২. ঈশ্বরের উপর বিশ্বাস উঠে যাবে তোমার।

৫৩. দুনিয়ার সব মেয়েকেই তোমার সুন্দর লাগবে।

৫৪. খাবার কেনার পয়সা না-থাকায় তুমি সিদ্ধান্তে আসবে- দুনিয়ার সব খাবারই অস্বাস্থ্যকর।

৫৫. সবকিছুতেই খুঁত দেখতে পাবে তুমি।

৫৬. পড়ে থাকা কাগজের টুকরা দেখলেই তোমার মনে হবে ওটা পাঁচশো টাকার নোট।

৫৭. যেকোনো ছেলে দেখলেই তোমার মনে হবে সে তোমার প্রেমিক হচ্ছে না তারই অযোগ্যতায়।

৫৮. তোমার মনে হবে সারাদিন এদিকসেদিক ঘোরাঘুরি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি মানবিক কাজ।

৫৯. তোমার মনে হতে থাকবে- তোমার শরীরে পেট ছাড়া আর কিছু নেই।

৬০. পয়সা না-থাকাই জ্ঞানীর লক্ষণ- তোমার বিশ্বাস হতে থাকবে।

৬১. ঘরের কুকুর ও বিড়ালেরাও তোমাকে পাত্তা দেবে না।

৬২. মৃত্যুকে ডাকতে থাকবে, এবং যমদূতের মতো কাউকে সামনে দেখলেই তুমি খেঁকিয়ে উঠবে- "দূর হ! দূর হ!"

৬৩. যেকোনো দুর্ঘটনায় বাড়ির সবাই তোমার দিকেই চোখ কুঁচকে তাকাবে সবার আগে- 'তোর দোষ।'

৬৪. আত্মবিশ্বাস শব্দটির বানান ভুলে যাবে তুমি।

৬৫. লক্ষ্য করলে দেখবে- তোমার ছায়াটিও নেই তোমার পেছনে।

৬৬. তুমি বুদ্ধিজীবী হয়ে উঠবে।

৬৭. তোমার প্রিয়তম ভাবনা হয়ে উঠবে এটি- 'এই সবই খোদার পরীক্ষা। আগামীকালটি নিশ্চয়ই সুখের হবে।'

৬৮. স্নান করার আধাআধিতে পানি ফুরিয়ে যাবে।

৬৯. 'অকারণ শুয়ে থাকার ১০১টি উপায়' শিরোনামক বইটি আদ্যোপান্ত মুখস্থ হয়ে যাবে তোমার।

৭০. "বিছানায় অমন শুয়ে আছ যে! অসুখ লাগছে?", এই আদুরে ডাক আশা করবে দুপুর ১১টায়ও প্রাণপণে চোখ বুজে শুয়ে থেকে; কিন্তু কানে ভেসে আসবে- "মুত্তেও কি উঠতে হয় না অন্তত?"

৭১. সেইসবই তোমার ভালো লাগবে যেসবের মুরোদ তোমার নেই।

৭২. তুমি ভাবতে থাকবে- তোমার প্রাপ্য সব টাকাপয়সা সরকার খেয়ে ফেলেছে।

৭৩. প্রত্যেকবার ঘুমোনোর সাথেসাথে তুমি স্বপ্নে দেখবে- কাচ্চিবিরিয়ানি খাচ্ছ।

৭৪. তুমি একটি জলজ্যান্ত কৌতুক।

দারিদ্র্য নিয়ে কাব্যের শেষ নেই, নীতিকথার অন্ত নেই। বাপ্রে বাপ! অথচ দারিদ্র্য গৌরবের কিছু নয়, এটা অযোগ্যতারই নির্দেশক। উপরে আমরা সরেজমিনে দেখলাম টাকা না-থাকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কী কী হতে পারে ঘরে, পরিবারে, সমাজে, আত্মীয়স্বজন-প্রতিবেশীর কাছে, এমনকি রাষ্ট্রের কাছেও। হ্যাঁ, মানবেতিহাসের ইতিহাস থেকে সাহিত্য, ধর্ম থেকে মানবতাবাদ, সমস্তকিছুই নিয়ন্ত্রণ করে এবং করবে টাকাওয়ালারা। দরিদ্র মানেই টাকাওয়ালাদের ঘুঁটি, তামাশার পাত্র। পয়সা রোজগার করার চেষ্টা করো, নইলে মরো। এর মাঝামাঝি জীবনটা জীবনই নয়। য়াপ, টাকা ম্যাটার্স।