আমার যে প্রেমটা আমাকে শিখিয়েছিলো, প্রেম এমনও হতে পারে! মানুষটা নেই আজকের ৩ বছর হতে চলল। এটাই আমার আপাতত এই বছরের জন্য শেষ লেখা এই ব্লগে। এই সিরিজের আগের কিছু পরে থাকলে হয়তো আপনার জন্য সহজ হবে। তবে, যেহেতু এইগুলো আমার খুবই ব্যাক্তিগত; আপনার জানার আগ্রহ না হওয়াটাই বরং আমার কাছে সত্যি মনে হবে।

আমাদের ব্যাক্তিগত কিছু কথোপকথন; শুধু ছন্দের চেষ্টা ছিলো।

আপনি প্রেমের সঙ্গা কিভাবে দেবেন?
যখন শিৎকারে ভাসে ঘর, ছিঁড়ে আসে ঠোট!
ঈশ্বর!
বায়না ধরুন একটা চুরুটের! যার মধ্যে থেকে আসে প্রেমিকের ভেজা শরীরের মিষ্টি গন্ধ!
আমি তখন আপনাকে উপেক্ষা করে বলবো, আমি নাস্তিক আপনার চাওয়ায়! প্রেমিক আমার! তার শরীর টাও!
আপনি কি জানেন? কতোটা প্রেমে খোলে প্রেমিকার শাড়ির কুঁচি?
আপনি কি জানেন? কতোটা ভালোবাসায় দেখা মেলে জীবন্ত স্বর্গের?
বিশ্বাসে মেলায় বস্তু,
তর্কে বহুদূর!
আর উপেক্ষায়.?
তোমার প্রাক্তন'রা তোমায় ছোঁয় নি।
আমি আজ ছুঁয়েছি বলেই প্রভাকর উজ্জ্বলিত!
তপ্ত দুপুরে রুদ্ধশ্বাসে প্রেমিক জ্বলে যায়!
তপ্ত বিকেলে প্রেমিকের শার্টের বোতাম খসে যায়।
তবে তপ্ত রাত গুলোয় আপনি আকাশ গোণেন কি করে?
আপনি জ্বলে যান না??
উঠে বোসো,
হাত ধরো।
কপালে রাখো আঙুল।
জ্বর এসেছে?
শরীর গরম?
কাঁধে রাখো মাথা,
চিবুকে হাত।
কথা বলো!
বলো তুমি যাবেনা!
মুখ ঘোরাতেই কপালচুমু,
নেমে আসবে নাকে, ঠোটে, থুতনি তে!
এবার হাত গালে!
চুমু থাকবে শুধুই ঠোটের তিলে সীমাবদ্ধ!
হাত নাও পিঠে,
গলায় রাখো দাগ।
খামচে রেখো চুল
যখন ই হারাবে কুল!
আঙুল নাও কোমরে,
এবার মননিবেশ হোক বুক জুড়ে।
খুজে বেড়াও নিজেকে।
ডানদিকে তিলের ঠিক মাঝখানটায় তুমি! খেয়াল করেছো?!
ভালোবাসা কি এভাবেই হয়না কমল?
লোকে তবে কি বলে?
তোমার ছোঁয়ায় নাকি পাপ আছে!
আমিতো সদ্য ভূমিষ্ট শিশুর মতোন পবিত্র হয়ে যাই তুমি ছুঁতে এলেই!
অপেক্ষায় বসে থাকি হৃদ্যেশ্বর!
আপনি আসবেন! বুকে মুখ লুখিয়ে পিঠ খামচে ধরবো!
আপনি রাখবেন ঠোঁটে ঠোট! ঘামের সাথে মিশবো আমি!
আসবেন ঠাকুর!
দুপুর ঝলসানো রোদে, আপনার শার্ট খামচে আপনার কাছে নির্ভরতা চাইলে পাবো??
কিংবা সঙ্গম শেষে আপনার গলায় আমার কপালের টিপ লেগে রইলে!
ফিরিয়ে দেবেন??
অস্বীকার করবেন ঠাকুর?!
পরের জন্মে অর্কিড গাছ হবো ঠাকুর!
আপনার যত্নে গড়ে উঠবো!
প্রেমিকার খোপায় আমায় গুঁজবেন ছিঁড়ে ছিঁড়ে!
ঠাকুর, বৃষ্টির পানির রঙ বোঝেন?
আপনার শরীরে, শার্টের ভাজে বৃষ্টি গড়ায়।
আমার কাজলের দাগ!
মুছে যেতে চাইলেও যে রঙ ধরে রাখে!
আমার ঠোঁটের লালচে আভা আপনার কাধ ছুঁলে যে রঙ মোছেনা!
আমার কোমরে আপনার ঘাম যেভাবে লেপ্টে রইলেও ভেসে যায়না সুখ!
সেটা বৃষ্টি!
ঠাকুর, চরণ ছুঁতে দেবেন?
চরণে জবা ফুল, আমি ভেজা চুলে দাঁড়িয়ে ,
আপনি পূজো নেবেন?

প্রিয়, যদি বলি আর ফিরছিনা ঘরে!
মোম জ্বালিয়ে দরজায় দাঁড়িয়ে উদ্বিগ্ন চোখে তাকাবে? নাকি খিল দিয়ে দরজায় ভুলে যাবে!
কিসব আজগুবি বিষণ্ণতার গালে পা রেখে হেটে যাই!
বিক্ষুব্ধ স্ট্রিটল্যাম্প জাগায় একে অন্যকে!
কিসব অদ্ভুত ফোঁপানির অন্ধকার বেড়ে ওঠে প্রচণ্ড পাহাড়ায়! যাচ্ছে তাই বিরক্তিতে সূর্যটা টেনে নেয় কুয়াশা ফুরোলে!
এমন জল বেয়ে যায় আঙুল, এমন পোঁকার কি ভীষণ প্রেম প্রস্তাব-
জানায়- "প্রিয়! আপনি কি আমায় খুঁজবেন হুট করে ডুবে গেলে!"
আর্তনাদ এক এবং একমাত্র - তুলনায়-
পোঁকাগুলো ডুবে যায়..
যেভাবে চিঠি- আজগুবে শব্দে আমার প্রেম!
আমি হেটে যাই ঠাকুর, পোঁকাগুলো ডুবে যায় দেখুন দূরের দীঘিটায়- বিনোদিনী হারায়!
এইযে এখান টা দেখছো!
হাত দাও।
এখানকার আকাশ টা বড্ড ধূসর!
আলো পড়ে! তবে ছাইরঙা।
তোমার আকাশ নাকি সিঁদুররাঙা!
শুনেছি রাতভর সেখানে ঝিঁঝিঁ ডাকে!
আমি শুধু রাতে পানির ওপর জলরঙা চাঁদ দেখি।
আর তুমি দেখতে আমায়!
সেবার ঈশ্বরের কাছে গিয়েছিলাম দিস্তা ভরা অধিকারের পাতা নিয়ে!
আমার দিকে তাকিয়ে হাসলেন কেবল।
আমি নাকি ভুল কলমে লিখেছি!
রঙ ঠিক নেই!
হা ঈশ্বর! আমি তো বর্ণান্ধ!

কবি, চেহারা বিকোয় কতোতে?
আর স্বত্ত্বা?
কবিতা বুঝি গাঙ এ ভাসা ভাঙা নৌকো!
বিচ্ছরি সব আর্তনাত,
নাও চেয়েছিলাম!
পদ্মপাতা দেখে বলেছিলেন ওতে কোরে পয়সা নিই না!
আমি কাঙাল তবে কবিতার আবদার মুখে করতেও ভয় হয়েছিল!
আত্মহত্যায় ও ঠিক জীবনের শেষ দেখতে পাইনা আমি,
ওরা বলে, মরে গিয়ে সব থেকে মুখ ফিরিয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে নিয়েছে ওরা!
মরে গিয়ে দায়িত্ব গুলো মরে যায়?
ইচ্ছে গুলো? স্বপ্ন গুলো?
প্রেমিকের? প্রেমিকার?
ঘর বাধার স্বপ্ন? আর সংসার?
সব বেঁচে থাকে! তাহলে সব কিছু থেকে মুক্তি পেলো কি করে ওরা?
ঝড় যখন উঠেইছিলো পূব দিকের দক্ষিণ কোণে,
হাত ধরার অপবাদে আমার হয়েছিলো ফাঁসি।
আমি বিনা দোষেই কূল হারিয়েছিলাম,
জেগেছিলাম রাত সহস্র কোটি
চোখের নিচের কালি ছিলোনা আমার কলঙ্কের!
দাগ পড়েছিলো অবাধ্যতার
আমি ভেসে গেছি অবহেলার বন্যায়,
অপারগতায় হয়েছিলাম শিক্ত।
আমি রোজ যখন ঠোট কেটেছি,
জালিয়েছি তামাকের সুর
কানে আমার বাশি ছিলো,
ভুল করে গেছিলো দূর।
আমি মেঘে তাকিয়ে ডুকরে কেঁদেছি,
হেমলক ও পারেনি মারতে ,
তার শব্দে, শীৎকারে আমি মরেছি রোজ
তার চোখের ঘৃণায় আমি বেঁচে ছিলাম তারপরেও!
তবুও ঝড়ের রাতে শেষ করেছিলাম সব ইচ্ছে,
মেরে ফেলেছিলাম তাকে।
শেষবার জড়িয়েছিলাম বুকের কোটরে
বলেছিলাম, "আপনি আমার হয়ে বাঁচতে পারবেন না জানি, মরে গিয়ে শরীরে ছড়িয়ে পড়ুন! "
একবার ভালোবাসুন!
আত্মহত্যায় ও ঠিক জীবনের শেষ দেখতে পাইনা আমি,
ওরা বলে, মরে গিয়ে সব থেকে মুখ ফিরিয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে নিয়েছে ওরা!
মরে গিয়ে দায়িত্ব গুলো মরে যায়?
ইচ্ছে গুলো? স্বপ্ন গুলো?
প্রেমিকের? প্রেমিকার?
ঘর বাধার স্বপ্ন? আর সংসার?
সব বেঁচে থাকে! তাহলে সব কিছু থেকে মুক্তি পেলো কি করে ওরা?
ওরা আপনায় সামলে দেবে ঠাকুর!
আপনি সামলে যাবেন!
আমায় নিয়ে ভাববেন না,
আমি মরে গ্যাছি।
ইতি,
বিনোদিনী

সঙ্গমের পর প্রেমিক যখন ঘামে ভেজা মুখ মাথা নিচু করে থাকে,
তখন আর ভাবতে ইচ্ছে করেনা পৃথিবীর পুরুষেরা কতোটা খারাপ!
আমার ঈশ্বরের রাগান্বিত রূপ দেখেছিলাম একবার।
আমার ঈশ্বর গর্জে উঠেছিলো।
উনার বুকে ভয়ে সেঁধিয়ে যেতে চাইলেও পারিনি..
আমার চোখ থেকে গড়িয়ে পড়া জল টাও সেদিন আর মুছে দ্যাননি উনি!
আমার ঈশ্বর ও নিষ্ঠুর হতে পারেন আমি বুঝেছিলাম সেদিনই!
ঈশ্বর, তুই কি খালি ধর্মই লিখিস?
সেই বাইবেলের পৃষ্ঠায় এক প্রেমিকা থাকে, প্রেমিক থাকে চার্চের সিঁড়ি তে, সেই সিঁড়িপথ ধরে প্রেম লিখিস না?
নাকি সে নাস্তিক?
তুমি বুড়ো হয়ে যাও প্রেম!
তোমায় ঘুণে ধরুক, চুল পেকে যাক!
ত্বক ঝুলে যাক!
আমি এইতো! পাশেই আছি!

স্বত্তায় জন্ম নেয়া পাপ আমার আচলে,
ধূলিকণা লেপ্টে থাকে শরীরে।
জন্মের অরুচীতে অসুস্থ শিশু চোখে জল নিয়ে কাদা চিবোয়।
তখন ও ঈশ্বর কি দ্যাখেন?
তিনি কি তখন ও ধর্ম লেখেন হাত পা গুটিয়ে?!
আমার ইচ্ছে করে।
আমার ইচ্ছে করে- আমি একবার ঈশ্বর হয়ে ভাগ্য লিখি নিজের।
নিজের, ওই অসুস্থ শিশুর! আচলে জড়ানো পাপের!
আমি হয়তো নিষ্ঠুর হতাম না, হোতাম না পাথরের মূর্তি কিংবা ক্রুশে ঝোলানো জীজাস।
আমি হোতাম খোপায় কৃষ্ণচূড়া দেয়া দীঘীর ঘাটে বসা পদ্ম।
আমার প্রেমিক হতো ওই কেবল একজন ই।
আমি ঈশ্বরী হতাম!
না-না! ইশ্বর ই হতাম!
প্রেমিক আমার পুজো দিতো। প্রেমিক সঙ্গমে আমায় সেজদা দিতো!
বাইবেল ছিঁড়তাম, শিশুটাকে খাইয়ে দিতাম
কিরে ব্যাটা? ক্ষুধা মরেনি? কাদা খাস ক্যানো?
আমায় খাবি? ঈশ্বরকে?
আচল থেকে পাপ নেমে আসবে বুকে, স্তনে।
খিলখিলিয়ে হেসে সে বলবে, আমায় কিছু মানুষ দিবি? পাপ হবো!
পাপেরা মানুষ চায়। আর মানুষ চায় ভালোবাসা।
ঈশ্বর ধর্ম লেখেন! ভাগ্য লেখেন!

প্রিয়তা,
তারপর কোথায় হারিয়ে গেলে তুমি? থইথই জোছনার রাতে, পৃথিবী যখন নিঃসীম সৌন্দর্যে মাতোয়ারা হয়, চারপাশের কোলাহল যখন পরিণত হয় নিঝঝুম নৈঃশব্দ্যে—আমি তখন খুঁজে ফিরি স্রেফ তোমাকেই।
আমার জানালার ফাঁক গলে ভেসে আসা জোছনা, ঝিরিঝিরি বয়ে যাওয়া শীতল হাওয়া, যখন আমার মশারির কোণে নাচন ধরায়—আমাকে কেমন ভাবালুতায় পেয়ে বসে তখন। বিশ্বাস করো, তোমাকে খুব বেশি মনে পড়ে।
আজ কতদিন কথা হয় না তোমার সাথে। বলো তো, এখন কেমন আছো একলা একা? আমাকে আর মনে পড়ে? দখিনা হাওয়ায় উড়ে আসা পুকুর পাড়ের সেই শিউলি ফুলের গন্ধে আমি কি এখন থাকি মিশে? নাকি তোমার অস্তিত্ব জুড়ে এখন বসবাস করছে অন্য কেউ?
তুমি একবার জিজ্ঞেস করেছিলে বড় হয়ে আমি কী হতে চাই! আমি আকাশের দিকে তাকিয়ে গভীর দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেছিলাম ‘যদি পাখি হতাম আমি’!
কেন পাখি হতে চেয়েছি আজ বুঝতে পেরেছো?
আমার আর তোমার মাঝে যেই দূরত্বের দেয়াল গড়ে উঠেছে অলক্ষ্যেই, পাখি হওয়া বিনে তা অতিক্রম করা যাবে আদৌ? আজ এখানে ‘পবিত্র’ একটি রাত নেমেছে। নক্ষত্র-সুষমিত আকাশের নিচে সেই কতক্ষণ ধরে বসে আছি একাকী। চাঁদের নৈসর্গিক আলো বিশালায়ত বৃক্ষের পত্র-পল্লবে যেই রেখা, যেই মায়া এঁকে দিয়েছে তা আমাকে উদাসীন করে তুলছে ভীষণভাবে! ভাবছি, হারিয়ে ফেলা সেই দিনগুলো যদি আবার ফিরে পেতাম! সর্পিল, আঁকাবাঁকা যেই মেঠোপথটি বয়ে গেছে ‘আলেয়ার খাল’ এর পাশ ঘেঁষে, পৌষ মাস এলে দিগন্ত জোড়া সরিষার ফুল যেখানে মোহন ছড়ায়—প্রায় এক যুগ আগের মতো, জোছনার আলো ধরে, সরিষা ফুলের ঝাঁঝালো গন্ধ গায়ে মেখে, যদি আবারও পাশাপাশি হাঁটতে পারতাম দু’জন!
আচ্ছা, এমন মায়াঘন রাতে পুরোনো অনুভূতিগুলো কেন ফিরে ফিরে আসে বলো তো? যেই পাখি নীড় চেনে না তার জন্য কেন এমন উতলে পড়া দরদ?
কেন নাগরিক জীবনের এত ব্যস্ততা, এত বৈচিত্র ভোলাতে পারে না বিনি সুতোর টান? জানি, তুমি ফিরে আসো বারবার বিচ্ছেদ-বেদনার অনলে আমাকে আরও বেশি পোড়াতে—তবুও এমন মোহনীয় সব রাতে আমি কামনা করি স্রেফ তোমাকেই। আমি চাই তুমি মিশে থাকো আমার অনুভবে, এমন সহস্র আলো-আঁধারির রাতে।
জীবন বদলে যায় কিনা জানিনা... তবে আমি এখন জীবিত, ভীষণ ভাবেই জীবিত।
লোকে বলে ভালোবাসার বিনিময়ে কি পায় মানুষ!?
ভালোবাসার কি আদৌ বিনিময় হয়!
এক ছন্নছাড়া জীবন বয়ে বেড়াতে বেড়াতে, এখন মন খারাপ, মন ভালো, কিংবা ভীষণ খুশির গল্প বলতে পারি...
তুমি... ভীষন রকম অন্যরকম... একদমই অন্যরকম...একদম আমার মনের মতো।
তুমি কি শুনতে পাচ্ছো!?
শুনতে পাচ্ছো!? বলো...
মানুষ নাকি হারাইয়া গ্যালেই খুজতে নামে,বুঝতে নামে বুকের ভেতরে কেমন আছিল?
একদিন দেখবা আমি আর নেই! হারাইয়া গ্যাছি।
আকাশে নেই, বাতাসে নেই! জলে নেই,ডাঙায় নেই।
পাখির পালকের মতো তোমার অবহেলায় পাশে পইড়া থাকনের কোথাও আমি নেই।
ফেসবুক,হোয়াটসঅ্যাপ, ইমু, ইনিস্টাগ্রামে, টুইটারে
আমি তোমার কোথাও নাই!
তোমার পথে নাই,পত্রে নাই ।কোন টিভি সংবাদপত্রে
অ জ্ঞা ত নামা শিরোনামে নাই। খবরের কাগজে বিজ্ঞাপনে নাই।
মাঝ সমুদ্রে ডুইবা যাওন জাহাজের মতোন ডুইবা গ্যাছি।
হারাইয়া গ্যাছি, যেইভাবে হারাইয়া যায় পানির ভেতরে লবণ কিংবা চিনির দানা।
বাতাসে যেইভাবে উধাও হইয়া যায় হাওয়াই মিঠাই
কিংবা দুধের ভেতর যেভাবে পানি মিইশ্যা গিয়া হারাইয়া যায় সেই ভাবে হারাইয়া গ্যাছি।
আমারে কোথাও খুইজা পাবা না।
বিষন্ন দুপুরের বায়নায় আয়না হইয়া গ্যালে
তুমি কি সেদিন কাঁদবা?,কাইন্দো না, তুমিও আমার হারাইয়া যাওনটা মাইনা নিও, কেমন।
মানুষ হারাইয়া যাওনের ব্যথা বুকের দাবিতে পুইষা রাখতে নাই।
জাইনা নিও,মানুষ হারাইয়া যাওনের ব্যথার কথারা, আগুন ছাড়াই পুইড়া মারে।
তুমি আমারে হারাইছো মানে- আস্ত একটা ভালোবাসার মানুষ হারাইছো।
তুমি আমারে হারাইছো মানে- একজোড়া বিশ্বস্ত হাত হারাইছো।
তুমি আমারে হারাইছো মানে- তপ্ত রোঁদে ব্যস্ত সিডিউলে তোমাকে মস্তিষ্কে রাখা মানুষ হারাইছো।
তুমি আমারে হারাইছো মানে- ছোট্ট ভুলে বিস্তর অভিমান করা পাগলটা হারাইছো।
তুমি আমারে হারাইছো মানে- তোমার গুপ্ত কথার নিখাদ বিশ্বস্ত শ্রোতা হারাইছো।
তুমি আমারে হারাইছো মানে- তোমার জন্য অবলীলায় কেঁদে দেওয়া মানুষটা হারাইছো।
তুমি আমারে হারাইছো মানে- তোমাকে ছাড়া নিঃস্ব অনুভব করা মানুষ হারাইছো।
তুমি শুধু আমারেই হারাওনি, তোমার দেবালয়ে অনুগত পূজারী হারাইছো।
শুধু নিজেকে হারিয়ে দিওনা- নকল হাসিতে লেপ্টে থাকা মিথ্যার স্রোতে।
আমি সইতে পারবোনা, নির্লিপ্ত পথিকের মত....

"মানুষটা যেদিন চলে গেলো, ঠিকঠাক জীবনটা ওলটপালট হয়ে গেলো নিমেষেই। মুখস্ত বুলির মতো সবাই বলতে লাগলো, 'একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে'
অনুভূতিরা বোধহয় গোলাপের পাপড়ির মতো। একদিন শুকিয়ে কাঠ হয়ে যায়, তবু প্রিয় বইটার ভাঁজে কেন যেন রয়ে যায় আজীবন।
আচ্ছা, শখের মানুষ কি শখ করে চলে যায়? কখনো নিয়তি এসে মৃ 'ত্যু' র গল্প শোনায়, কখনো অবহেলা নেমে আসে অসময়ের বৃষ্টির মতো, কখনো পোষ না মানা শালিকের মতো উড়ে যায় মানুষটা।
কখনো মন উঠে যায়। একদিন সকালে মানুষটা শীতল কন্ঠে জানায়, সে চলে যাচ্ছে। আমি ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে তার প্রস্থান দেখি। যেমন করে কাঁধে ভারী ব্যাগ নিয়ে হাঁপাতে হাঁপাতে শেষ ট্রেনটাকে স্টেশন ছাড়তে দেখে অসহায় যাত্রীটা।
প্রিয় মানুষের প্রস্থান জীবনে একটা দাগ কে টে যায়। সেই দাগে কেউ এফোড় ওফোড় হয়ে যায়, কেউ বা আবার সেই দাগ সযত্নে লুকিয়ে রেখে সব সামলে নেয়।
লোকে আবার বলতে শুরু করে, 'জীবন কি একজনের জন্য থেমে থাকে? অন্য কাউকে আগলে ধরে বাঁচো'
শেষ ট্রেনটা চলে যাওয়ার পরে অনেক দিন পর স্টেশনে আবার ট্রেন এসেছিলো, থেমে ছিলো অনেকটা সময়। ক্লান্ত আমি কাঁধের ভারী ব্যাগটা নিয়ে এবারও উঠতে পারি নি।
ব্যাগের ভেতর শুকনো গোলাপের পাপড়ি, এক বর্ষা নিংড়ানো স্মৃতি, অবহেলার বরফগলা নদী, সহস্র পাতার প্রত্যাখানের মহাকাব্য আর প্রস্থানের শোকসভা - সব রেখে দিয়েছিলাম। অতকিছুর ভার নিয়ে হয়তো বেঁচে থাকা হয় কোনোভাবে, কিন্তু আর কোনো ট্রেনে ঠিক উঠা হয় না।

তুমি মারা যাবার পরে থেকে আমার আর কোন বন্ধু নেই।
‘আমার কোনো বন্ধু নেই,
যার কাছে আমি নিজেকে ভেঙেচুরে, খুচরো পয়সার মতো জমা রাখতে পারি।
যে আমাকে যত্ন করে সঞ্চয় করবে, প্রয়োজনে ফিরিয়ে দেবে একটা একটা আধুলি।
সত্যি বলতে আমার কোনো বন্ধু নেই।
বন্ধু বলতে জেনেছি যাদের, তারা কেবল পথ চলতে সঙ্গী ছিল।
দূরের পথে ট্রেনে যেমন থাকে, পাশের সিটে। গল্প হয়, দু পেয়ালা লেবু চায়ের দাম মেটাতে ‘আমি দিচ্ছি, আমি দিচ্ছি’ যুদ্ধ হয়। সিগারেটের বাড়িয়ে দেয়া টুকরো ফুকে, এই যে নিন ফোন নম্বর, এদিকটাতে আবার এলে ফোন করবেন,’ বলা শেষে অচেনা এক স্টেশনে উধাও হয়।
এই যে আমি পথ হাঁটছি, রোজ ঘাটছি বুকের ভেতর কষ্ট, ক্লেদ,
এই যে আমি ক্লান্ত ভীষণ, বুকের ভেতর জমছে কেবল দুঃখের মেদ,
তবুও আমার নিজের কোনো বৃক্ষ নেই।
প্রবল দহন দিনের শেষে, যার ছায়াতে জিরোবো ভেবে ফিরে আসার ইচ্ছে হয়,
তেমন একটা ছায়ার মতন, আগলে রাখা মায়ার মতন আমার কোনো বন্ধু নেই।
একলা দুপুর উপুড় হলে বিষাদ ঢালা নদীর মতন,
একলা মানুষ ফানুশ হলে, নিরুদ্দেশ এক বোধির মতন,
হাতের মুঠোয় হাত রাখবার একটা কোনো মানুষ নেই।
আমার কোনো বন্ধু নেই।
আমি কেবল কোলাহলে ভিড়ের ভেতর হারিয়ে যাই,
ভুল মানুষে, যত্নে জমা ফুলগুলো সব বাড়িয়ে যাই,
হাওয়ায় ভাসা দীর্ঘশ্বাস বাতাস ভেবে,
নির্বাসনের একটা জীবন মাড়িয়ে যাই।
আমার কোনো বন্ধু নেই,
যার কাছে আমি নিজেকে ভেঙেচুরে, খুচরো পয়সার মতো জমা রাখতে পারি।
যে আমাকে যত্ন করে সঞ্চয় করবে, প্রয়োজনে ফিরিয়ে দেবে একটা একটা আধুলি।

কতকাল ভালোবাসা হয় না নিজেকে।
অথচ, যেই মানুষটা উধাও হলো একলা রেখে, তার জন্য বুকের ভেতর কান্না জমে, রাত্রি জানে ঘুম জমে না চোখের পাতায়, যন্ত্রণাতে!
কই? এই আমিতো আমায় ছেড়ে যাইনি কোথাও! দুঃখ দিইনি!
ওই যে মানুষ দুঃখ দিল, ভাসিয়ে দিল অথৈ জলে। যার জন্য হৃদয় জানল, বিষাদ ছাড়া চোখের কোনো ভাষা হয় না।
কান্না ছাড়া এই জনমে ভালোবাসা হয় না।
তার জন্য তবু কেন বুক ভাঙল? গভীর রাতে গহিন কোথাও কুহক ডাকল!
এবার খানিক সময় পেলে গুছিয়ে নেব। কান্না এবং হাসিটুকু নিজের থাকবে।
নিজের জন্য মেঘ থাকবে, রোদ থাকবে। উদাস দুপুর, পদ্মপুকুর নিমগ্নতায় চুপ থাকবে। ইচ্ছেমতো এই আমাকেই ভালোবাসব।
ভালোবাসতে বাসতে অন্য মানুষ, আজ কতকাল ভালোবাসা হয় না নিজেকে।
তোমার বুকের খুব কোটরে আমার মাথা ব্যাথা অস্ত যায়।