সত্যই বেদনা

প্রাক্তনের থেকে একটা মেইল এসেছে; বেশ সুন্দর করে লিখেছে বটে। লেখাটা একদম তার মতই সুন্দর। আমাদের মাত্র এক বছরে একটা ভাঙ্গাচোরা সম্পর্ক ছিলো। কি জানি, কোন সম্পর্ক ছিলো কিনা ?

ইশ, আমার একটা কবুতর থাকতো!

পুরনো দিনের যে মুভিগুলো আছে, তাতে তো প্রায়শই দেখতাম কবুতরের পায়ে চিঠি বেঁধে পাঠিয়ে দেয়, আমিও যদি অমন করে তোমার কাছে চিঠি পাঠাতে পারতাম! সব কথা না হোক, কিছু কথা তো অন্তত বেনামী চিঠিমাধ্যমে তোমায় বলতে পারতাম!

এখন কেমন আছো বলো তো?! কত্তদিন ঝগড়া করিনা তোমার সাথে! কত্তগুলা দিন হয়ে গেলো তুমি আমার গরম মেজাজের ওম পাওনা! মিস করো সেসব তুমি? তোমার সাথে চিল্লাপাল্লা করে আমি অদ্ভুত এক প্রশান্তি পেতাম, কি আগ্রহ নিয়ে আমার কপালের সাতটা ভাজের দিকে তাকাতে, কটমট করে তাকিয়ে থাকা রক্তচক্ষুর জলে ডুবে যেতে। এরপর যখন বলতাম- 'সব দোষ তোমার', এই কথা শুনে তখন তুমি যে প্রতিক্রিয়া দেখাতে বিশ্বাস করো আর নাইবা করো ওর কাছাকাছিও আর কোন সুখকর দৃশ্য আমার দেখা হয়নি কখনো!

শোন, এবার একটু নিজেএ যত্ন নিও; বিড়ি, সিগারেট, মদ, গাঞ্জা, ভেপ যাই খাওনা কেন, এসব খাওয়া একটু বন্ধ করো বুচ্ছো!
ইতি,
তোমার প্রেমিকা
image

তোমার কাছে আমার ১০৩টি অর্গাজম পাওনা আছে।
১০০০ বার 'আমি তোমাকে ভালোবাসি', এবং
১০৬ কাপ কফি,
পাওনা আছে।

তোমার কাছে আমার পাওনা আছে অন্তত একটি সুন্দর দিন।
তোমার শার্টটি নিতে ভুলে গেছ তুমি, এবং অই ফালতু লোশনটা
সেটা আমার সহ্য হয় না;
তোমার আন্টির রুচি কী বীভৎস!

তোমাকে এসব লিখার কোনো কারণই নেই।
আমাকে হয়তো দুঃখ দাওনি—
খাওয়ার মাঝে এখন আর তোমার জন্য কাঁদি না,
অচেনা কোনো মুখে তোমার মুখ খুঁজি না।

শোনো, অবশেষে আমি হলুদ রঙে অভ্যস্ত হয়েছি, তবুও ফুল ঘৃণা করি;
যেমন ঘৃণা করি— ঠিক ১২টায় কফি খেতে পারি না— বন্ধুবান্ধবের এই মন্তব্য।

তোমার গানের রেকর্ডগুলো, কন্ডোম এবং টাইগুলো, ফেলে দিয়েছি।
ওসব কাজে লাগে না আর, ওসব চাইও না।
তোমার শার্টটি আমার গায়ে ঠিকমতো হয়েছে, এখন এটি আমার প্রিয় জামা;
এর ঘ্রাণ আমার পাশের বাড়ির সেই লোকটার পারফিউমের চেয়ে ভালো, যে আমাকে দেখলেই
বলতে থাকে—
ওরা তো চমৎকার দম্পতি ছিল! ভুল করলো।

যেন ভালো থাকার জন্য কাউকে-না-কাউকে দরকার পাশে!

কাজ থেকে ঠিক সময়মতোই ফিরি— ৮টায়,
৯টায় স্নান করি, ইচ্ছে হলে।
১০টায় তোমাকে মনে পড়ে যায় অল্পস্বল্প,
তখন ভীষণ বিরক্তি আসে নিজের উপরে;
আজেবাজে ভাবনায় ঘুম ভেঙে যাওয়া, বিরক্তিরই।

ছুটির দিনে, ওই ছবিটির দিকে তাকাই টেকিলা পান করতে-করতে
যেটি আমরা তুলেছিলাম তৃতীয় বিবাহবার্ষিকীতে,
একটি সিগ্রেট ধরাই এবং ধোঁয়া ছাড়ি তোমার মুখের উপরে,
ঝাপসা করে দিতে মুখটি—
তোমার হাসিটি না-দেখার জন্য নয়,
আমাকে নির্বোধ ভাবতে— এটি ভুলতেও নয়।
এসব নিয়ে এখন আর ভাবি না।

অবশেষে!

আজ সারাদিন তোমাকে মনে পড়ছিলো।
বাজে কিছু নয়, অন্যভাবে;
আমরা কতোটা কী ছিলাম— এ নিয়েও নয়।

মনে হয়, প্রিয় মিষ্টি আলুর স্মৃতি!

প্রিয় মিষ্টি আলু,
ভুলতে পারি না— কী যে সুস্বাদু হয়ে উঠতো
যখন সযত্নে তুমি পোড়াতে।

আজ তুমি নেই,
ভাগ্য ভালো যে তুমি নেই—
জীবন চিনেছি।

image

সুভাষ বাড়ি করে দিয়েছে মোহনাকে।
আমরা ভাড়া-বাসার মেঝেয় ঘুমোই;
তোমার কষ্ট হয়, দেখি।
জাহিদ নাহিদাকে নিয়ে লংড্রাইভে যাওয়ার জন্য গাড়ি কিনেছে।
আমরা শঙ্খনদের তীরে হাঁটি, হেঁটে যাই হেঁটেই আসি;
তোমার খুব ইচ্ছে একবার কক্সবাজার যাওয়ার, জানি।
মৃণাল ডায়মন্ডের সেট কিনে দিয়েছে বৃষ্টিকে, কত্তো দামি!
দেখে, আমরা পুরো একমাস স্বপ্নে বিড়বিড় করেছি— "রাজগহনা!"
তোমার গাজরার মালাকে দীর্ঘশ্বাস ছুঁয়ে থাকে মাঝেসাঝেই, শুনি।
সরোজ সগৌরবে হাঁটে রওশনের গোলাপি দেহের নিখুঁত জ্যামিতিক বাঁক পাশে নিয়ে।
আমরা নিজেদের বিকিয়ে সন্ধ্যেরাতে ঘরে ফিরি ঘামে জবজবে;
তুমি দোর দিয়ে দ্রুত, কালো ত্বকের দিকে তাকাও সলাজ, বুঝি।
যে-রাতে জ্বরে কাঁপতে থাকা তোমার মুখের উপরে উপুড় আমি কাঁদছিলাম চুপচাপ,
ওইসময় তোমার গণ্ড বেয়ে গড়িয়ে নামা লোনা-ফোঁটাটির কারণ— জ্বর নয়,
আমার অশ্রুরই বিনিময় ছিল— জেনে ফেলেছিলাম বলেই,
আমিতুমি গাড়িহীন,
বাড়িহীন,
রূপহীন,
রাজগহনাহীন
এবং বিচ্ছেদহীন
সুখজলে ভাসি।

যতই ভাবছ পাচ্ছ আমায়, পাচ্ছ না ঠিক পাচ্ছ না—
ইচ্ছে করেই মরণ ছুঁচ্ছ, ইচ্ছে করেই বুঝছ না।

খুব বেশি নিকটে যেয়ো না—
মুগ্ধতা ফুরিয়ে যাবে, তাকে পাবে না।
শরীর ক্ষয়ে গেলে, পড়ে থাকে নগ্ন হৃদয়—
নগ্নতা এভাবেই অসহ্য রূপময় হয়।

image

আমার চিরকাল দেরি হয়ে গেলো।
কিছু কথা বলার ছিল,
কিছু কথা রাখার ছিল,
কিছু কথা কাউকে শোনানোর ছিল,
আকুল হয়ে কাউকে ডাকার ছিল।
আমার চিরকাল দেরি হয়ে গেলো।
কাউকে কাঁধ দেওয়ার ছিল,
কারও হাত ছোঁওয়ার ছিল,
কারও সাথে দীর্ঘ পথ হাঁটার ছিল,
কারও পাশে থাকার ছিল।
আমার চিরকাল দেরি হয়ে গেলো।
ঋতুদের বদলে যাওয়া দেখার ছিল—
নিজের বদলে যাওয়া চেনার জন্য,
কারও স্মৃতি মনে রাখার ছিল—
কারও স্মৃতি ভোলার জন্য।
আমার চিরকাল দেরি হয়ে গেলো।
জনমদুখিনীকে বুকে নেওয়ার ছিল—
জনম থেকে বওয়া দুঃখ ভুলতে,
জীবন দুঃখের সমুদ্দুর—
কাউকে এ জানানোর ছিল।
আমার চিরকাল দেরি হয়ে গেলো।

যারতার সামনে কেঁদো না।
অশ্রু কারও কাছে হেমলক, কারও কাছে নিতান্তই লোনাজল।