অতঃপর মানুষ যা বলে—

image

এই যে কারও জন্য ভেতরের অনাবিল উথালপাথাল, ভুড়ি ভুড়ি স্ট্যাটাস, নিজেকে রোজ রোজ দমিয়ে বেঁচে থাকা, সমুদ্র সমান মনখারাপ, আমরা চাই সেই মানুষটা অন্তত জানুক, একবার দেখুক। মনে হয় যেন একমাত্র সে-ই পারে আমাদের ভাঙাচোরা, ছড়িয়েছিটিয়ে থাকা টুকরোগুলো একজোট করে আমাদের মনের অসুখ সারিয়ে তুলতে।

আমরা চাই কেউ অন্তত খারাপ থাকুক আমাকে ছেড়ে গিয়ে, হতাশা নিয়ে চলাফেরা করুক, তারপর এমনই কোনো ঝড়ের শেষে ফিরে আসুক অসংখ্য প্রশ্ন আর ভেজা চোখ নিয়ে। খুব সন্তর্পণে হাত রাখুক বুকে, মিশিয়ে দিক তার শরীরের ওম আমার ময়লা জামা বা টি-শার্টে ।

মাইনসের কথা চিন্তা কইরা কোন লাভ নাই। মানুষ না মরলে কেউ কাউরে ভালো কয়না। ছিলো তো অনেকেই, পথে কতজনরে হারাইলাম; এই দুনিয়ার সবকিছু এমন প্যাচ লাইগা আছে রে ভাই! কোনডা আসল, কোনডা নকল; সেইটা বুঝতে পারিনাই।

যেই মানুষটা সারাজীবন পাশে থাকবে বলে কথা দিয়েছিল অথচ পাশে থাকাটা যার হয়নি, সে চলে যাবার পর, অপর পাশের মানুষটা যেভাবে ঝড়ে লন্ডভন্ড হয়েও সুন্দর মতো বেঁচে আছে, কেউ জানেনা তার ভেতরে প্রতিনিয়ত কি পরিমাণ ঝড় বয়ে যায়, যেই ঝড়ের শব্দ পৃথিবীর কেউ শুনতে পায় না। অথচ জগতের সামনে সে একজন চমৎকার গোছানো মানুষ।

শার্ট প্যান্ট পরা যেই লোকটা প্রতিনিয়ত দুপুরে একটা সিঙ্গারা সমুচা খেয়ে দুপুর পার করে দিচ্ছে, সবার চোখে সে একজন স্বাবলম্বী মধ্যবিত্ত মানুষ। অথচ যেই সিঙ্গারা গিলতে গিয়ে প্রতিনিয়ত তার গলায় সেটা আটকে থাকতো, যেই সন্তানের চেহারা কল্পনা করে সে রোজ যুদ্ধ করে যেত, যেই জীবনকে সে শতবার অভিশাপ দিত, সেই অভিশাপের চিৎকার কেউ শুনলো না। সবাই ধরে নিল সে সুখী মানুষ, চমৎকার মানুষ।

দিনশেষে যে ঘরে ফিরে দেখলো তার ঘরটা শূন্য, যেই ঘরে সারাদিনের গল্প বলার মানুষ নাই, যেই ঘরের চার দেওয়ালে শূন্যতা, সেই ঘরে মানুষটার হাহাকার কেউ দেখে নাই। প্রতিনিয়ত অভিনয় করে যেই শূন্যতা পূরণের চেষ্টা এই চেষ্টার খবর কেউ জানে না। অথচ জগতের কাছে সে একজন পরিপূর্ণ মানুষ!

যেই মানুষটার মাথায় হাত রাখলে ঝরঝর করে কেঁদে দেয়, যাকে একটু সান্তনা দিলে মন উজাড় করে সব গ্লানি উড়িয়ে দেয়, যার পাশে নীরবে বসে থাকলে একটু শান্ত হয়, যেই মানুষটা ছলছল চোখে একটু আশ্রয় খোঁজে; পৃথিবীর চোখে সে সবচেয়ে সুখী সুন্দর মানুষ হলেও মানুষটা নিজে জানে সে কতটা বোঝা বয়ে বেড়াচ্ছে, জগতের কেউ কিছুই টের পেল না।

পৃথিবীতে প্রতিনিয়ত আমরা চমৎকার সব মানুষ দেখি। খুব ঝড়ের পরেও দাঁড়িয়ে থাকতে দেখি। অথচ আমরা জানি না, কত শত কায়দা করে তারা দাঁড়িয়ে থাকে, কত ভার বহন করে তারা নিজেদের সোজা রাখে। কত সুন্দর করে সবকিছু মানুষ গুছিয়ে রাখে; অথচ আমরা যা দেখি তা আসলে তা না।

Just because someone carries it well, doesn’t mean it isn’t heavy, i repeat doesn’t mean it isn’t heavy!

মানুষ যে জিনিসটা সহজে পেয়ে যায়, সেটাকে নির্মমভাবে অবহেলা করতে শুরু করে। যে বা যারা তার জন্য একরকম হৃদয় খুলে রেখে দেয়, তাকে অপদস্থ করার কোনো সুযোগই ছাড়ে না,,সেটা জেনে হোক কিংবা না জেনেই হোক। সামনের মানুষটার উৎকণ্ঠা, ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না, নির্ঘুম রাত কোনোটাই তাকে টলাতে পারেনা। অবশেষে অজস্র আঘাত সহ্য করে যখন সামনের মানুষটা ক্লান্ত হয়ে থেমে যায়, মুখ ফিরিয়ে নেয়, তখন মানুষের টনক নড়ে। ততদিনে হয়ত সামনের মানুষটার বুকের ভেতরের জমে থাকা পাথরটা পাহাড় হয়ে গেছে, কিংবা তার ইচ্ছেনদীর শেষ জলটুকুও বাষ্প হয়ে গিয়েছে, কান্না শুকিয়ে গিয়েছে। সম্পর্ক, এফোর্ট, প্রায়োরিটি কোনোটাই কিন্তু ভিক্ষা চাওয়ার জিনিস নয়।

যে জিনিসটায় শুধু আমারই অধিকার, সেটাকে নিজের কাছে জিইয়ে রাখার জন্য অত অ্যাপিল কেন করতে হবে! কেনই বা বারবার প্রমাণ দিতে হবে!

কেউ যদি তোমার চোখের জলটাও অস্বীকার করে চলে যেতে চায় , গোটা পৃথিবী ওলোটপালোট করে দিলেও তাকে আর আটকে রাখা যাবেই না...

সমস্ত ঋতু শুধু কী স্মৃতিক্রান্ত করার মহড়া! শাদা ফুলের ঘ্রাণে রাত মৌ মৌ করে এইখানে৷ ঘুমের ভেতর তোমার মুখ হাতড়ানো স্বভাবের আমি—আকাশের দিকে মুখ করে শুই। অন্ধকার, তারও ফাঁকে দুএকটা তারা জ্বলার বাসনা নিয়ে উঁকি দিতে থাকে—তোমারে কি মনে পড়ে তখন!

কার দুঃখ বেশি? বিষাদ বাষ্প হয়ে ঝরে পড়া বৃষ্টির ফোঁটার নাকি দোয়েলের-ফড়িংয়ের যার সাথে আমাদের কোন কালেই দেখা হয় না?

কার দুঃখ বেশি? নিকষ আঁধারে পথ হারিয়ে ফেলা সূর্যমুখীর? নাকি শেষ মুক্তো টাও ধরে না রাখতে না পারা কচুরিপানার?

কার দুঃখ বেশি? মৃতপ্রায় নক্ষত্রের নাকি সবাইকে ছাড়িয়ে একলা দাঁড়িয়ে থাকা পাহাড়ের? কিংবা আমার?

এর উত্তরটা বোধ হয় সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের চেয়ে সুন্দরভাবে কেউই দিতে পারবে না-“পৃথিবীতে এত দুঃখ,মানুষের দুঃখই শুধু তাঁর জন্মকালও ছাড়িয়ে যায়।”

তবে দুঃখ খুব একটা মন্দ নয়। সকল উত্থান-পতনের মাঝেও হঠাৎই কোন এক নির্ঘুম শেষ প্রহরে কিছু শব্দের খাম উপহার পাই,কিছু হাতের অবলম্বন পাই, অনুভব করি কাঁধে একটুখানি উষ্ণতা। তখন উপলব্ধি হয়, পৃথিবীটা তো না থাকারই জায়গা। এটুকু বিষাদে কিইবা আসে যায়!

ওই সকল শব্দ,হাত কিংবা উষ্ণতাদের জন্য-

Beyond ideas of wrongdoing and rightdoing

there is a field.

I’ll meet you there.

When the soul lies down in that grass

the world is too full to talk about.


তুমি কিংবা তারা অধঃপতন চেয়েছিলে। বাইরে হাস্যোজ্জ্বল রোদ। ফাঁকা রাস্তা। চেয়ে দেখো কোন পাহারাদার নেই। গেটে বাধা নেই কুকুর। বেড়ি হাতে সিড়ি বেয়ে আমার দরজার সামনে দাঁড়িয়ে দুঃখ—

অরুন্ধতী,

আমার ভালো-খারাপ, কঠিন মুহূর্ত, স্নান করার পর পড়ন্ত রোদে আজ চুল শুকোবো কি না কিংবা আচকমা তোমাকে জাপ্টে ধরার পর আমার নিঃশ্বাসপ্রশ্বাসের গতি কমে যাচ্ছে কি না!

এসব যদি আমাকে অক্ষরে অক্ষরে বলে দিতে হয় তাহলে তুমি আর আমার মনের হদিশ পেলে কই!

তোমাকে একটু-আধটু আবিস্কারক তো হতেই হবে। কাঠখোট্টা, মধ্যবিত্ত জীবনে হঠাৎ একদিন নতুন আফটারশেভের গন্ধটা পেলে অথবা বেলী ফুল যুত করে খোঁপায় রাখা থাকলে বুঝে নিতে হবে আমার জীবনে তোমার অধিকার ঠিক কতখানি। সামনে “ভালো আছি” বললেও তোমাকে ছাড়া ঠিক কতটা খারাপ থাকবো এটুকুর আঁচ যদি তুমি নাই পাও, তবে আমাকে পুরোপুরি রাখতে পারলে কই!

চিৎকারগুলো তোমার সামনে অপ্রকাশিতই থাকুক , তবে তোমার কপাল ছুঁয়ে ঠোঁটে নেমে আসার মুহূর্তটায় যদি আমার নীরবতাটুকু শুনতেই না পারো তাহলে আর সেরকম ছোঁয়াচে হলে কই!

মনের দরজাটা কখনও হুটহাট খুলতে নেই জানোতো! যে একাধিকবার টোকা দিয়ে সারা না পেলেও ওই চৌকাঠ আগলেই অপেক্ষা করতে শিখেছে, তাকেই আমরা আমাদের ঠান্ডা লাগার ধাতে,অকাট্য অভিমানে,ভীষণ জ্বরের ঘোরে কিংবা চোখের জলে জমিয়ে রাখতে পারি চিরটা কাল ,, অক্ষতভাবে।

একটা বিচ্ছেদের বিকেলবেলাতেও সামনের মানুষটার চোখে অপেক্ষা থাকবে, কোনোভাবে আবার ফিরে আসবার লালসা থাকবে, এটাই তো স্বাভাবিক। মানুষ ভালোবাসলে গাছ হয়, একে ওপরের বুকের জমিনে অবাধ শিকড় ছড়াতে থাকে, তাই উচ্ছেদ হয়ে গেলেও শিকড়ের একটা অংশ কোনোভাবে ঠিক আটকে থেকে যায় পাঁজরের ফাঁকে,, যা আমাদের অহেতুক কষ্ট দেয়, অনবরত উপলব্ধি করাতে থাকে কিছু একটা কম থেকে গেল বেঁচে থাকায়, কে যেন একটা “আসছি” বলেও আসেনি আর সময় করে।

অনেকদিন কিংবা কয়েক বছর পরও তাই দেখবেন খুব চেনা একটা রবীন্দ্রসঙ্গীত, কবেকার ফেলে আসা একসময়ের রাস্তাটা, খাবারের দোকান, সামান্য বৃষ্টির ফোঁটা হঠাৎ আপনাকে আবার ছুঁরে ফেলে দিচ্ছে সেই মুহূর্তটায় যখন কেউ আপনার ঠোঁটের নিষেধরেখা অতিক্রম করে ফেলেছিল।

এটাই সেই রয়ে যাওয়া শিকড়ের টান,,

চোখটা আবার ছলছল করে উঠলো কি? জানা নেই....

তবে এবারে একটা মিষ্টি হাসি অবশ্যই ফুটে উঠবে,, আর কোনো ঘৃণা নেই, সম্ভাবনা নেই, মানুষটা নেই।

শুধু একটা আফসোস থেকে যায়, ইসস্ যদি একবার ওকে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে শেষবারের মতো বলতে পারতাম, “আমার তোমাকে ছাড়া থাকতে খুব কষ্ট হয়.....”

ভালোবাসা ব্যাপারটা আসলেই কিন্তু সুন্দর।

আমি তোমার ফিরা যাওয়া পথের দিকে তাকায়ে থাকি, যতক্ষণ তোমারে দেখা যায়, তোমার ছায়া যবে কংক্রিটে লুকায় আমি ফেরার পথ ধরি।

আমি ফিরি তয় আমার সত্তা ফেরে না, সে অপেক্ষা করে তুমি ডাক দিবা, বলবা - আর কিছুক্ষণ দাঁড়ান, সব কথা তো শেষ হইলো না, আমার কপালে তো আপনি চুমু খাইলেন না, আমারে একটাবার জড়ায়েও ধরলেন না, আমি বলতে পারলাম না আপনারে ছাইড়া যাইতে আমার মেলা কষ্ট!

image

“জীবনে এগিয়ে যেতে হলে, ছাড়তে জানতে হয়”,

একটা বড়োবেলা যেভাবে ছেড়ে দেয় বিকেল চারটের মাঠ-টাকে, একটা কোনোকালের দস্যি মেয়ে যেভাবে ছেড়ে এসেছিল মেলায় কেনা খেলনাবাটি, খোঁপায় বাধা পলাশফুলের সখ, ভিন রাজ্যে অফিস ফেরৎ ছেলেটা ছেড়ে এসেছিল বাবা-মায়ের মনখারাপটা কিংবা বইয়ের প্রথম পাতা যেভাবে ভুলে গিয়েছিল উৎসর্গ করা নাম,,

সেভাবেই ছাড়তে জানতে হয় মানুষের অবহেলাটুকু, ধুয়ে ফেলতে জানতে হয় কান্নার শেষে গালে আবছা জলের দাগ, ছেড়ে আসতে জানতে হয় হাত, কারো প্রশ্ন ভরা ছলছল চোখদুটোয় নির্ঘুম রাত। এই ছেড়ে আসাগুলো ভুল নয়, এই ভুলে থাকা মানেও ভালো থাকা।

সেটা অভ্যেস হোক, মুহূর্ত হোক বা গোটা একখান মানুষ...

কারও বাহ্যিক গঠন, রুপের মোহ, গুণের পরিসর দেখে আপনি তার প্রেমে পড়তে পারবেন, তার মায়ায় জড়াতে পারবেন, তার কাছে আরও কিছুক্ষণ বেশি থেকে যেতে পারবেন তবে আপনার ভালোবাসাটা হবেনা।

ভালোবাসার পরিধি বরাবর-ই ছোটো, যেখানে শর্ত কম, চাহিদা কম, অভিযোগ কম,, ঠিক যেন একমুঠো চাল হাড়িচতে চাপিয়ে দু-জন বিন্দুমাত্র অভিযোগ ছাড়াই পেট পুরে খেয়ে নিল।

সামনের মানুষটাকে আপনি কেন ভালোবাসেন? - এটার উত্তর যদি আপনি না দিতে পারেন! বুঝবেন আপনার থেকে বেশি তাকে আর কেউ ভালোবাসতেই পারবেনা।

আমরা মনে করি ভালোবাসতে প্রচুর সামর্থ্য লাগে, সক্ষম হতে হয়, নিজের পার্টনারকে সময়ে সময়ে ফিল করাতে হয় “

I am the one who can fulfill your all desires”...

আসলেই কি তাই!

কখনও কচু পাতায় মোড়ানো কিছু শিউলি ফুল এনে প্রেমিকার সামনে রাখবেন, কিংবা দীর্ঘ চুমুর শেষে প্রেমিকের গালে আলতো করে হাত রেখে বলবেন “সাবধানে বাড়ি যাস”, তারপর তার চোখ দুটোতে আপনি যা দেখবেন তা বিশ্বের কোনো সম্পদের বিনিময়েই কেনা যায়না।

হ্যাঁ, এতুটুই সমর্পণ চায় মানুষ। সে চায় ভেতরে ঝমঝমিয়ে বৃষ্টির শেষে কেউ তার ছাদ হয়ে উঠুক, গুমোট অন্ধকার ভেঙে জোৎস্না টেনে আনা উত্তরের জানালাটা হয়ে উঠুক কিংবা তার যে কোনো পরিস্থিতিতে ঠাঁই পাওয়ার মতো সম্পূর্ণ নিজস্ব একখান ঘর হয়ে উঠুক।

মানুষের হৃদপিন্ড ঘুরে ঘুরে আবিস্কার করেছি,

নিজের চেয়ে ব্যক্তিগত আর কিছু নেই!

কটা জিনিস পর্যবেক্ষণ করলাম, আমি ভান করতে পারিনা দেখে আমার আশেপাশের মানুষদের কাছে আমার অ্যাপিয়ারেন্স অনেকটাই মেরমেরা। আমি সহসা কারো খুব প্রিয় কেউ হতে পারিনা।

কারন খুজতে গিয়ে বুঝলাম, আমার বাস্তববাদী মনোভাব এবং সোজাসাপটা কথা বলা। আমি কোন কথাকেই খুব রসিয়ে পেচিয়ে বলতে পারিনা, ভেতরে যা বাইরেও তাই-ই। আমি ভুল বা অপরাধকে এড়িয়ে না গিয়ে ভুলকে ভুল বলে বসি, যা মানুষ অপছন্দ করে। চরিত্রগতভাবেই মানুষ তার সাথে তাল মিলিয়ে যাওয়া সারাউন্ডিংস পছন্দ করে।

আমার খারাপটুকুও আমি লুকোতে যাইনা, আমি চাই যে বা যারা আমার পাশে থাকবে তারা আমার খারাপটুকু জেনেই থাকুক। কোন মানুষই স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারেনা, ত্রুটি থাকবেই।

মানুষ ভান পছন্দ করে, তারা ইটের দেয়াল চায়। কাচের স্বচ্ছতায় তাদের চোখের অশান্তি হয়।

অরুন্ধতী,

তুমি আজকাল গেরস্থালী জিনিসটা ভালো ভাবেই রপ্ত করা শিখে গেছ– আমারে দেখলেই উঠানে ছড়াইয়া দেও দুঃখের দানা!

একটা বয়স পর আমরা একটা কেন্দ্র বিন্দুতে পরিণত হই, নিজের আঁকা বৃত্তেই নিজেকে গুটিয়ে ফেলি। জন্মের রহস্য আর মৃত্যু’র উন্মাদনা ক্ষ্যান্ত হলে, সর্বশান্ত মন তখন হলুদ সরষে দানার মাঠ খোঁজে। খুঁটির দড়ি ছিড়ে শৈশবের পোষ্য ছাগলটি যেমন কোনোদিন সেই সরষের স্বাদ পায় না, আমাদের বেলায়ও তাই হয়। প্রকৃতি তার সঠিক বন্টনে ব্যতিক্রম করে না।।

আমার বয়স আমাকে ভালোবাসার মানুষের খোলস হতে শিখিয়েছে। পৃথিবী উল্টে গেলেও আমার ভালোবাসার মানুষের মন্দ,দোষ আমি বাহিরের সব থেকে কাছের মানুষকেও বলবো না , সিকিভাগ বুঝতেও দিবো না। একদম খোলস হয়ে , ঝিনুকের মতো যেভাবে ভালোকে আগ্লে রেখেছিলাম দোষ অভিমানকেও ভেতরে রেখে দিবো।

এই পৃথিবীর কারো ক্ষমতা নেই আমার সামনে ভালোবাসার , ভালোবাসার মানুষের পক্ষে বিপক্ষে রায় দেওয়ার। আমার বয়স আমাকে ভালোবাসার মানুষের খোলস হতে শিখেয়েছে। সে থাকুক , না থাকুক যা ইচ্ছে করুক ভ্রম্মান্ড জানুক সে নিরেট।

image

ব্যক্তিগত শব্দে আমি একটা উপন্যাস।

বায়ান্ন লক্ষ পৃষ্ঠার নথিপত্র নিয়ে ঘুরে বেড়াই।

মাঝেমাঝে ছেড়ে দিই যেকোন পৃষ্ঠার কিছু অংশ।

বিশ্লেষণ করি কিছু লাইন।

বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা করি নিজস্ব মতবাদকে।

নিজস্ব ব্যর্থতা ঢাকতে গিয়ে—

বারবার আলোচনা করি জীবনবোধ নিয়ে।

বৈচিত্র্যতারও দাঁড়িকমা বসে জীবনবোধেই।

অতঃপর মানুষ যা বলে—

নিজের জন্য

নিজের সুবিধার জন্য— নিজেকে শুদ্ধ দেখানোর জন্য বলে।

শহরের প্রতিটা প্রেমিক, প্রতিটা প্রেমিকা—

প্রতিটা মানুষই নিজেকে রক্ষা করার, নিজেকে স্বচ্ছ দেখানোর অদ্ভুত ক্ষমতা নিয়ে—

নতুন নতুন নিয়ম বসায় আর কিছু নিয়মকে অস্বীকার করে।

সেজন্যই একজনের ব্যক্তিগত উপন্যাস অন্য আরেকজন পড়তে পারে না।

কারণ প্রতিটা মানুষেরই ব্যক্তিগত উপন্যাস রয়েছে।

যা প্রতিটি সকালে আকার পরিবর্তন করে,

হয়ে যায় আনুমানিক বায়ান্ন লক্ষ থেকে বায়ান্ন লক্ষ এক হাজার পৃষ্ঠা।

মানুষ মূলত সামাজিক, কিন্তু একা । সমাজে এই একটা প্রানী যে পুরোপুরি সামাজিক খেতাব নিয়েই একা ।

কেউ শেষ বয়েসে একা হয় , কেউ অল্প বয়সে । আমার মনে হয় সবচেয়ে জঘন্যতম একা হচ্ছে তারুণ্যে একা হওয়া । আজকে আমি আমার আলাপ করি । আমার চারপাশ ভর্তি অনেকগুলো মানুষ । এরা ভিন্ন ভিন্ন সময়ে আমার খরাতে একেকটা বাগান হয়ে এসেছিলো আমার জীবনে । কখনো আমি বাগানের সব ফুল ছেটে দিয়েছি অথবা কখনো বাগান আমার মাটিতে আর স্বাদ পায় নি বলে চলে গিয়েছিলো অথচ দুটোতেই আমি বরাংবরই একা হয়েছি । অনেকেই বিশ্বাস করে একদিনে ম্যাজিকাল কিছু হয়ে যায় কিনা , আমি বিশ্বাস করি হয় , বোধ বাড়ে , সহ্য ক্ষমতা বাড়ে , মনে প্রাণে বিশ্বাস বাড়ে কে আমার কে আমার নয় । অথচ এই গত কয়েকমাস ধরেই আমি বন্ধুদের সাথে মিশছি , রেস্তোরায় খাচ্ছি , ক্লাশ করছি , ছবি তুলছি , ফেসবুকে ইনস্টায় পোস্ট করছি । কি অসম্ভব সামাজিক একটা জীবন আমার । অথচ আমি একা ।