এমন একটা জীবনে, যখন সবকিছু হারাতে বসেছিলাম। তখনই, বাড়ি থেকে খবর এলো বিয়ের কথা হচ্ছে! আমার, মানুষের উপর থেকে বিশ্বাস এমনভাবে উঠে গিয়েছিলো যে আমার পাশে এই মুহূর্তে বসা মেয়েটার সাথেই যে বিয়ের কথা হচ্ছে সেটা আমি এতোটুকুও বুঝিনি। আমার, দুইটা ব্যর্থ প্রেমের সাক্ষী এই মেয়ে কেন আমাকে বিয়ের প্রস্তাব বাড়িতে দিয়েছে তা আমি আজও জানিনা। আর, জানারও ইচ্ছে নাই।
তাকে খুঁজো না, যাকে তুমি তীব্র আকাঙ্ক্ষা করো।
তাকে খোঁজো, যে তোমাকে তীব্র আকাঙ্ক্ষা করে─
সে ছেড়ে যাবে না।
একফালি চাঁদ আর বুনো আলু মেখে ভাত খেয়েছো কখনো! অথবা রাতের কুয়াশা গিলে নেশা করেছো? ভালবেসেছো রোদ্দুর কে? শীতে পিঠ খুলে দিতে আপত্তি নেই তোমার। গরম পড়লে প্যারিসের প্রসাধনী! কাল রাতে তাই করেছি, মেঘেদের সাথে নেশায় বুদ হয়ে মুখস্থ করেছি ভালবাসার সংলাপ। মহড়া করেছি বারবার ভালবাসার। ত্রিশ বছর পর নটি বিনোদিনী পালা শেষে বাড়ি ফেরার পথে, দত্তপুকুরের ঘাটে দাঁড়িয়ে ভেবেছি, আজ ঢিল ছুড়ে দেব তোমার বাম বুকে। আহত শরীরে রক্ত ঝরে পড়লেই আমি ছুটে গিয়ে একটা বিক্রিয়া ঘটিয়ে দেব। ব্ল্যাক হোলে ভালবাসা নামক একটা প্রোটন কণায় ছুঁড়ে দেব সূর্য রশ্মী। এরপর একটা বিস্ফোরণ! দৈনিক পত্রিকার কার্বন গুলি কুয়াশায় ভিজিয়ে নেশায় বুদ আমি। পত্রিকা বেঁচে নেশা করি। নেশা বেঁচে পত্রিকা করি। আজ চুমু খাওয়ার দিন।
আমার হাওয়াই চটিগুলি এলুমিনিয়ামের তারে জড়িয়ে সুর তোলে রাজপথে আমার সাথে হাটতে হাটতে। আমার শ্বাস প্রশ্বাসে বেস গীটারের রিদম। শুনতে পাচ্ছো! আমার হৃৎপিণ্ডের ওঠানামায় ড্রাম মেজরের জাতীয় সঙ্গীত। ডিলান বা কনার রেকর্ড নেই আমার দেরাজে। কি দিই তোমায় ভ্যালেন্টাইনের উপহারে! আমার পাহাড়ের বুনোফুলে কোন গন্ধ নেই। নদীর জলকে দিতে পারি আরশি করে তোমায় উপহার। কিন্তু সেই আড়শি বড্ড ঘোলাটে। তোমার মুখ অস্পষ্ট দেখাবে। আমি ভেবেছি আমার চোখের ছানি কোনদিন কাটবো না। প্রয়োজনে অন্ধ হব। আমার চোখে তোমার ঐ রুপের কাটাছেরা হয় প্রতিদিন। মনে রেখো আমি এই দুনিয়ার সবচেয়ে খারাপ মানুষটি একজন। ঘৃণা করো? আমার বয়েই গেছে। করুণা করবে! প্রত্যাখান করবো। আমন্ত্রণ রইল, এসে দেখে যাও যারা ভাষা জানেনা, তাদের ভালবাসার কথা একবার শুনে যাও। ম্যারলিন মনরোর পোস্টারে সেঁটেছি তোমার মুখ। শরীরটা তোমার নয়। যা দেখে আমার শরীর কোনভাবেই উত্তেজিত হয়নি কোনদিন। প্রেম নামক ন্যাকা ন্যাকা কোন বিষয় নিয়ে তোমার সাথে কোন তর্ক করতে আমি নারাজ। ভাবসঙ্গীত বাজবে না দৃশ্যপটে। এসো প্রকাশ্যে দাঁড়িয়ে চুমু খাবো, সংসদের ওয়েলে বসে। কোন বেওয়ারিশ শিশুকে কোলে তুলে নিয়ে ভিজে যাক তোমার ব্লাউজ! এসো, হাত ধর। সৃষ্টি যেভাবে চেয়েছিল নিজেকে স্পষ্ট করতে সেভাবে আমার ভালবাসার বীজ বপন করে জানান দাও পৃথিবীকে, আজ শধু ভালবাসার দিন। আজ কনফেস করারও দিন।
এসো চুমু খাই সূর্যের দিকে তাকিয়ে।
ঠিক কতটা ভরসা থাকলে, বুকের দিকে লক্ষ্য করে এগিয়ে আসা হাতটাকে বিশ্বাস করা যায়?
কিম্বা চোখ বন্ধ করে নেওয়া যায় অক্লেশে!
কজন পারে প্রেমিকার স্তনের নীচের হৃদয় ছুঁয়ে ফেলতে?
নিজের হৃৎপিণ্ডের শব্দ এত্ত মনকাড়ানিয়া হয় নাকি?
ঠোঁটে ঠোঁট ঠেকিয়ে ফেলাটা জৈবিক চাহিদার থেকে বেশি হয়ে যায় কখনো কখনো..
আর তারপর চোখে না দেখাটা, শ্বাসকষ্টের মুখোশ পরে ন্যায় ভরদুপুরে।
মাঝরাতে পাশবালিশ পিষতে থাকা মেয়েটার নজর থাকে ম্যাসেঞ্জারের টুংটাঙে...
প্রেম শব্দটা খুব 'খেলো' রে পাগলী...
তুই আমার কাছে অক্সিজেনের মতো প্রয়োজনীয়...
আমার বিগত দুইটি ব্যর্থ প্রেমের সাক্ষী এই মেয়ে, আমার সবচেয়ে খারাপ সময়ে পাশে থেকেছে। যেবার, হাত ভেঙ্গেছে- এই মেয়েটাকে আমি জানাইনি; আমার, রাগ এতো বেশি। কিছুদিন আগেই, আমাদের রিসিপশন হয়ে গেলো। এসবে, ম্যামের কথাই শেষ কথা। সেই, রিসিপশনের পরে আমার প্রাক্তনের মেসেজ এসেছে।
— তোমার বউয়ের যা আছে, আমারও তা আছে। ভাদাইম্যার মতো বউ-বউ করো কেন রাতদিন?
— আমার বউয়ের মতো তোমারও স্তন আছে, চুমু আছে, একইরকম না-হলেও ভ্যাজাইনা আছে। আমার বউয়ের মতো তোমারও শীৎকার আছে, রোমান্স আছে হয়তো আরও রোমান্টিক। আমার বউয়ের মতো তোমারও শিক্ষা আছে, রুচি আছে, আয়রোজগার আছে, হয়তো রান্নাও আমার বউয়ের চেয়ে ভালো। আমার বউয়ের মতো তোমারও মিষ্টি হাসির অভিবাদন আছে, ঊষ্ণ আলিঙ্গন আছে। তুমি আমাকে আলিঙ্গনে নিয়ে কাঁদো, আমার বউও কাঁদে; প্রত্যেকবার তুমি কাঁদো তোমাকে দেওয়া তোমার বরের অসম্মান নিয়ে, তার অযোগ্যতা নিয়ে; আমার বউ কাঁদে আমার অনিরাময়যোগ্য অসুখ নিয়ে, আমার সইতে না-পারা যকৃতের যন্ত্রণা নিয়ে। তুমি কাঁদো তোমার জন্য, বউ কাঁদে আমার জন্য। কেন বারবার বউয়ের কাছে ফিরে যাই? কেন বউ-বউ করি? স্বার্থে। আমার অসুখ তুমি নাওনি, তোমার অসুখ ভাগ করতে আসো; আমার অসুখ নিজের ভিতরে নিয়েও যে আমাকে ছেড়ে যায় না, নিজে কুরে-কুরে মরে যায়, তাকে জপি বলে যদি ঈশ্বরও কাফের বলে আমাকে, তবু সে আমার।
সকাল সকাল ঘুম ভাঙার পর সে এসে জিজ্ঞেস করে "সকালে কি দিব?"
আমি উপুর হয়ে শুয়ে না তাকিয়েই বলি "কিচ্ছু না"।
সে আবার বলে "পরোটা বানায় দেই?"
আমি বলি "লাগবে না, খিদা নাই।"
সে আবার বলে "মাখা মাখা মুরগীর মাংস দিয়ে ২ টা পরোটা ভেজে দেই?"
আমার বিরক্ত লাগে। ছ্যাঁত করে বলি "বলছি তো কিছু খেতে ইচ্ছা করতেছে না, যাও না!"
সে যায় না। দরজা ধরে দাঁড়ায় থাকে। তারপর পাশে এসে বসে। পিঠে হাত বুলায় দেয়। মাথার চুলে বিলি কাটে; আমার আরাম আরাম লাগে। তারপর কোন এক অজানা অপরাধবোধ চলে আসে ভিতরে। বুঝতে পারি না কিভাবে এই অপরাধবোধ কাটাবো। আড়ষ্ঠতা কাটাতে ছোট করে বলি "চা খাবো, চা দাও।"
সে চলে যায়। আমি জানি চা খেতে গিয়ে দেখব টেবিলে পরোটা, মাংস বা ডিম ভাজা দেয়া থাকবে। খাওয়ার সময় সে বসে থাকবে সামনে। আমিও চুপচাপ বসে খেয়ে নিই। আর না তাকায়েই বুঝতে পারি খাচ্ছি আমি কিন্তু পেট এবং মন দুটোই ভরছে ওর। ❤️❤️