
আমাদের চিঠিপত্র; শরীর ছুঁয়ে প্রেম আমার হয়নি। আজ বিশেষ দিন আমার - আমাদের।
প্রিয়তমেষু,
ব্যালকনি তে দাঁড়িয়ে আকাশ দেখা ছাড়া কাজ নেই। মাস্টারমশাই ছুটি দিয়েছে। আজকাল বাজার নাকি চড়া। গোপীনাথ বলে বাজারে আগুন লেগেছে। সামনে পূজো। আকাশ টা বেশ নীল! শরতের আকাশ বোঝাই যায়! প্রতিবারের মতো এবার হয়তো আপনি আর ভোর ব্যালা শিউলী হাতে দাঁড়িয়ে থাকবেন না। আপনার ও তো বেজায় কাজ পড়ে গ্যাছে। এবার তাই বলে পূজোর ছুটিও পাননি বুঝি! যাহোক! আমার ও তো অভিমান হয়! আপনি আসবেন না,এই খবর আমি পেয়েছি শিবানীর কাছে। ক্যানো? আমার ঠিকানা নেই আপনার কাছে? নাকি ভুলে গ্যাছেন? আচ্ছা শুনুন মশাই, আমি একটা মাফলার বানিয়েছি। সুন্দর হয়নি অবশ্য! কমলার মা বানানো শিখিয়েছে। এটাই প্রথম বানালাম! আপনার পছন্দ হবে কিনা! আপনার তো এতো ঠান্ডা লাগে। ওই কাশী এ বুঝি এতো শীত! আপনি আসবেন কবে? আচ্ছা, গতো তিনটে চিঠির উত্তর ও দ্যান নি। আমায় অপেক্ষায় রাখতে বুঝি খুব ভালো লাগে? আপনি আসলে কোনোদিন ই বুঝবেন না। এবার দেখবেন! খুব ভোরে জানালার কাছে এসে "হেম, এই হেম" বলে ডাকলেও আমি জানালা খুলবোনা। থাকবেন ওই শীতে পড়ে। আমার ঘুম খুব প্রিয় হবে তখন! আচ্ছা শুনুন হয়েছে কি! সেদিন নলিনী বাবু এসেছিলেন আমার বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে। আমায় নাকি ঠিক লক্ষী ঠাকুরের মতো দেখতে লাগে! শুনুন কান্ড! সারাজীবন অলক্ষীই শুনে এলাম মায়ের মুখে! যাহোক! পাত্র দিল্লিতে থাকে। বড় ব্যাবসা আছে! বিলেত থেকে এম এ ডিগ্রী এনেছে নাকি শুনলাম! আমি বুঝিনা! আমার মতো এমন গাছে উঠে বরই পেড়ে খাওয়া মেয়েকে কেউ পছন্দ করে কিভাবে! তো মামা আমায় বলতে এসেছিলো একবার দেখবো কিনা! আমি বলে দিয়েছি যে আমার গ্র্যাজুয়েশনের আগে আমি কোনো পাত্রের মুখ ও দেখতে চাইনা। পরে আর কি! মামা মাথা নিচু করে পরাজিত হয়ে চলে গ্যালো! আপ্নাকেও বলি! এতোদিন হয়ে গ্যালো মশাই! এবার অন্তত আমার হাতটা চাইতেই পারেন! থাক নাহয় এসব কথা। আপনার পছন্দ হবেনা। আচ্ছা, আমি রান্না শিখে নিয়েছি, আপনি বাড়ি এলেই রেঁধে পাঠাবো। কমলার মা এতো ভালো রান্না পারে! কি করে এতো গুন থাকে একটা মানুষের!
আচ্ছা এবার একটু প্রেমের কথা বলি। আপনি কি আমার চিঠি গুলো একবার পড়েই ফেলে দ্যান? নাকি বারবার করে পড়েন! জানেন? আপনার শেষ চিঠিটা আমি তিন মাস যাবৎ পড়ছি। যেটায় শুধু তিনটে লাইন ই লিখা মাত্র! সেদিন শুনলাম ফাল্গুনীর বর বিলেত থেকে হুট করে একদিন না জানিয়ে এসে চমকে দিয়েছে! কি যে খুশি হয়েছে মেয়েটা! আপনিও কি কোনো একদিন এসে আমায় চমকে দেবেন? কিজানি! আকাশকুসুম চিন্তা আমার!
আপনি ভালো আছেন তো? খাওয়া দাওয়া করছেন ঠিক মতো? নিজের খেয়াল রাখবেন!
ভালো থাকবেন।
আমি ভালো নেই।।
ইতি,
হেম

ঠাকুর, আমার বুঝি কষ্ট হয়না! জ্বরের মাঝেও খুব করে বিনোদ বিনোদ করে প্রলাপ বকেছেন! আমি সারারাত্তির জেগে জলপট্টি দিলুম! আমি বুঝি কেউ হইনে! আমার কি ভুল বলুন তো! রাঙা মা'য়ের দোষ সব! ক্যানো নিয়ে এলো আমায় এখানে! আমি তো এখন আর চলেও যেতে পারিনে! যাবো কি করে! বড্ড ভালোবেসে ফেলেছি যে! মায়ায় বেঁধেছেন বড়! আপনি কি কোনোদিন ও আমায় ভালোবাসবেন ঠাকুর! বুকে নেবেন আমায় ও? "আমার কঙ্কা.." বলে কপালে চুমু দেবেন! সত্যি হবে এসব!
আমার ঈশ্বরের রাগান্বিত রূপ দেখেছিলাম একবার।
আমার ঈশ্বর গর্জে উঠেছিলো।
উনার বুকে ভয়ে সেঁধিয়ে যেতে চাইলেও পারিনি..
আমার চোখ থেকে গড়িয়ে পড়া জল টাও সেদিন আর মুছে দ্যাননি উনি!
আমার ঈশ্বর ও নিষ্ঠুর হতে পারেন আমি বুঝেছিলাম সেদিনই!
ঠাকুর, চরণ ছুঁতে দেবেন?
চরণে জবা ফুল, আমি ভেজা চুলে দাঁড়িয়ে ,
আপনি পূজো নেবেন?
ঠাকুর, বৃষ্টির পানির রঙ বোঝেন?
আপনার শরীরে, শার্টের ভাজে বৃষ্টি গড়ায়।
আমার কাজলের দাগ!
মুছে যেতে চাইলেও যে রঙ ধরে রাখে!
আমার ঠোঁটের লালচে আভা আপনার কাধ ছুঁলে যে রঙ মোছেনা!
আমার কোমরে আপনার ঘাম যেভাবে লেপ্টে রইলেও ভেসে যায়না সুখ!
সেটা বৃষ্টি!
দুপুর ঝলসানো রোদে, আপনার শার্ট খামচে আপনার কাছে নির্ভরতা চাইলে পাবো??
কিংবা সঙ্গম শেষে আপনার গলায় আমার কপালের টিপ লেগে রইলে!
ফিরিয়ে দেবেন??
অস্বীকার করবেন ঠাকুর?!
পরের জন্মে অর্কিড গাছ হবো ঠাকুর!
আপনার যত্নে গড়ে উঠবো!
প্রেমিকার খোপায় আমায় গুঁজবেন ছিঁড়ে ছিঁড়ে!
ঠাকুর, চরণ ছুঁতে দেবেন?
চরণে জবা ফুল, আমি ভেজা চুলে দাঁড়িয়ে ,
আপনি পূজো নেবেন?

খুব আদুরে বুক জড়িয়ে খোঁজার ক্লান্তির ঘাম,
যখন একলা দুয়ার শান্ত হয়, অবসাদে জীবন পায়,
প্রিয়, যদি বলি আর ফিরছিনা ঘরে!
মোম জ্বালিয়ে দরজায় দাঁড়িয়ে উদ্বিগ্ন চোখে তাকাবে? নাকি খিল দিয়ে দরজায় ভুলে যাবে!
প্রিয়! আপনি কি আমায় খুঁজবেন? হুট করে ডুবে গেলে!
এইযে এখান টা দেখছো!
হাত দাও।
এখানকার আকাশ টা বড্ড ধূসর!
আলো পড়ে! তবে ছাইরঙা।
তোমার আকাশ নাকি সিঁদুররাঙা!
শুনেছি রাতভর সেখানে ঝিঁঝিঁ ডাকে!
আমি শুধু রাতে পানির ওপর জলরঙা চাঁদ দেখি।
আর তুমি দেখতে আমায়!
সেবার ঈশ্বরের কাছে গিয়েছিলাম দিস্তা ভরা অধিকারের পাতা নিয়ে!
আমার দিকে তাকিয়ে হাসলেন কেবল।
আমি নাকি ভুল কলমে লিখেছি!
রঙ ঠিক নেই!
হা ঈশ্বর! আমি তো বর্ণান্ধ!
ছিঁড়ে ফেলুন অন্তর্বাস
তার মাঝে আঁকুন মানচিত্র, প্রেমের।
নাহয় হবেন সবচেয়ে শুদ্ধ মানব!
নাহয় সে হবে বেশ্যা!
হাঁটুন এক সন্ধ্যা, কষ্টের।
হাত ধরুন, আঙুলের ফাকে আঙুল
নাহয় হবেন সন্ন্যাসী আপনি,
সে হবে কুলটা।
শূচিবাই নাহয় থাকলো হাতে, পায়ে, শরীরে
ঠোট ছুঁইয়ে দিন একবার পাঁজরে।
হতে পারেন সবজান্তা,
সে নাহয় মূর্খই রইলো!
যখন ছুঁইয়ে থাকবেন ক্লিভেজ,তার শ্বাস দেখুন
আবেগ আর প্রেম ও না দেখার কিছু নেই!
চোখ বুজে যখন যে জড়িয়ে ধরে,
নাহয় হবেন মনভোলা, নাহয় থাকবে শ্বাসকষ্ট,
তার গায়ের গন্ধ টা একবার নিয়ে দেখুন, দেখুন কি অপেক্ষায় দিন গোনার ঘাম সেগুলো!
তবে তার চোখে জল আপনার কারণেই যখন গড়েছে, তখন সে শুদ্ধ প্রেমিকাই থাকে, বিশ্বাস করুন!
সত্যি বলছি বিশ্বাস করুন, সে শুধু আপনার বুকেই জ্বলতে থাকা স্বর্গ পায়।
সন্ধ্যে নামে প্রেমিক বুকে, লেপ্টে থাকে প্রেমিকা।
রাত্তির গড়ায় শিৎকারে।
মাঝ রাতে ঘুমের ঘোরে জড়ায় প্রেমিক সন্তর্পণে।
তারপর হয় ভোর, ক্লিভেজ এ আটকে থাকে ভালোবাসা।
স্টেশন পেরোয় রেল, সবুজ পেরোয় শহর।
ভুলে যাওয়া বিতর্ক আর জড়িয়ে থাকা হেম!
অপেক্ষায় বসে থাকি হৃদ্যেশ্বর!
আপনি আসবেন! বুকে মুখ লুখিয়ে পিঠ খামচে ধরবো!
আপনি রাখবেন ঠোঁটে ঠোট! ঘামের সাথে মিশবো আমি!
আসবেন ঠাকুর!

হেম,
এখানে নয়, যতটা পথ তুমি হেঁটে এসেছো, তার কোথাও না কোথাও তুমি ঠিক দাঁড়িয়ে পড়তে পারতে! একটা আয়না চুরি করে নিয়ে, তার সামনে গিয়ে- নিজেকে শাসাতে পারতে, বলতে পারতে, যে আগুন তুমি ছুঁয়ছো, তা কতটা পুড়িয়েছে, তোমার ঐ নরম বুক! এতোটা নীরবে নয়, যতটা আওয়াজ তোমার ভেতর লুকিয়েছো, তার থেকে কিছুটা যদি কন্ঠে তুলে নিতে পারতে, শব্দের কম্পনে কেঁপে উঠতো এই উদ্বাস্তুর জরায়ুতে ঘুমিয়ে থাকা শহর, তুমি জানিয়ে দিতে পারতে, তোমারও আমাকে কিছু বলবার ছিলো! আজ এতোদিন পরে নয়, তুমি যতটা অবহেলায় হারিয়ে গেছো, তার সামান্যটুকু যদি বিনিময় করতে জানতে, যদি একটু ঘৃণা ধার করে আনতে প্রাগৈতিহাসিক কোন মানুষের কাছ থেকে, পথ ছেড়ে আসতে গিয়ে পা হারানোর যন্ত্রণায়, তোমাকে একাকীত্বের গহীনে ডুবতে হতো না! তুমি যদি পারতে, আমাকে জড়িয়ে রাখতে তোমার পাঁজরে, এখানে নয়, যতটা পথ তুমি হেঁটে এসেছো, তার কোথাও না কোথাও, আমাদের আবার দেখা হয়ে যেতো!

রাত্তিরে কার পেটিকোট খুলে তুই ঈশ্বর হলি!
সকাল হতেই কার চুলের মুঠি ধরে বাইরে নিলি!
কার গর্ভে বাড়ে তোর পৌরষত্বের বীজ?
কার পায়ের নিচেই তুই বেহেস্ত খুঁজিস??
চলুন শুদ্ধ হওয়া যাক!
আপনি কপালে একটা চুমু এঁঁকে দিন,
আমি গঙ্গা হয়ে যাই!
অপেক্ষায় বসে থাকি হৃদ্যেশ্বর!
আপনি আসবেন! বুকে মুখ লুখিয়ে পিঠ খামচে ধরবো!
আপনি রাখবেন ঠোঁটে ঠোট! ঘামের সাথে মিশবো আমি!
আসবেন ঠাকুর!
হেম,
অনেক সময়ই অনেক কিছু বলার থাকে, বলাই হয়না, বলাই হয়না, "শুধু তোকে ভালোবাসি!" বলাই হয়না, "তোকে ছাড়া খুব কষ্টে থাকি!" বলাই হয়না, "কী রে ফোন করিস না কেন? মনে পড়েনা আমাকে?" বলাই হয়না, "জানিস কাল স্বপ্নে দেখেছি তোকে, কিন্তু এটাও বুঝেছি যে এটা স্বপ্ন, তাও জোর করে চোখ বন্ধ করেছিলাম!" বলাই হয়না, "ওই আবার আমাদের পছন্দের গানটা শুনছি এখন, লিঙ্ক পাঠাবো, এবার প্লিজ ডাউনলোড করে নিস, বারবার খুঁজে দিতে পারবো না !" বলাই হয়না, "অনেকদিন পরে কাঁদলাম!" বলাই হয়না, "কালকে রাতে খাইনি, কিন্তু তোকে তাও জানাইনি, ভাববি ন্যাকামো করছি!" বলাই হয়না, "আজকে লিখবো না, লিখলে বুঝে যাবি শুধু তোর জন্যে লিখছি!" বলাই হয়না, "আমি ভালো নেই!" বলাই হয়না, "তুই কেন একবারও জিজ্ঞেস করিস না আমার কথা!" বলাই হয়না, "কাজল পরিসনি কেন? অসুস্থ অসুস্থ লাগছে!" বলাই হয়না, "কী রে? প্রোফাইল পিকচার চেঞ্জ করিস নি কেন? মন ভালো নেই তোর?" বলাই হয়না, "একবার আসবি ফিরে, একবার শুধু, প্লিজ!" বলাই হয়না বলা ভুল, সবশেষে কী ভাবি জানিস, "যে তুই ভালোবাসিসই নি, ভালোবাসলে বলতে হয়না এসব কথা, নিজেই বুঝে যেতিস,প্রেমিকের চোখ গলার আওয়াজ শুনে, আর যদি সেটা নাই ধরতে পারলি তাহলে আর তুই প্রেমিকা হলি কোথায়? প্রেমিকা হলে ঠিক আঁকড়ে ধরতিস, ঠিক ধরতিস, ভালোবাসতে শিখতে হয় জানতে হয়, "গোপনে নেশা ছাড়াও এর মতন, যদি গোপনে প্রেমিক-প্রেমিকা হও" এর জন্য যদি কোথাও প্রাইভেটে কোর্স করায়, তোকে ভর্তি করাবো, আমিই টাকা দিয়ে ভর্তি করাবো, শুধু মন দিয়ে পড়বি, পাস করার জন্যে নয়, ভালোবাসে যে মানুষটা তার পাশে থাকার জন্যে,কেমন?"
চলুন হৃদ্যেশ্বর! আজ আপ্নায় ভুলে যাওয়া যাক!
আপনাকে ভুলে গেলাম ধরুন!
গুটি পায়ে আপনার কাছে আসা!
অপরিপক্ব চুমু!
অন্তর্বাসের ফাঁকে জড়ানো ঘামের বিন্দু!
শিৎকারে প্রেম!
সব ভুলে গেলাম!
আপনি ছায়া চেয়েছিলেন নিজেই মহীরুহ হয়ে!
আমি ছিলাম ছোট্ট অর্কিড লতা!
আপনি বিকেল চেয়েছিলেন!
আমি তখন ও কালবেলা!
আপনি আমাতে খুঁজেছিলেন ঘর!
আমি ভাঙা একপাশ দেয়াল!
আমি ভুলে গেছি!
আপনার দেয়া ডাকনাম!
কিভাবে ক্লান্তি গড়ায় কপাল বেয়ে!
কিভাবে ধুলোয় মুখ কালো!
কিভাবে আমায় জড়িয়ে বলতেন ভয় নেই!
ভুলে গেছি অতীত, বর্তমান!
ভুলে গেছি ইচ্ছের সঙ্গম
ভুলেছি চোখের আশপাশ!
তবে হবে কি?
আপনি কি আবার নতুন করে সাজাবেন ঘর? চাইবেন বিকেল? ছায়া?
আপনি কি ক্লান্তিতে একই ভাবে ঘেমে, ডাকনামে ডেকে তুলবেন ভোরবেলা!
আপনি কি করবেন?
আমি ভুলে গেলে!
হেম,
নিঃশব্দে চলে গেছে কত স্মৃতি বুকের উপর দিয়ে, পাহাড়ি নদীর স্রোতের মতো কত জল ঢেউ খেলেছে চোখ বেয়ে। কেউ ডাকে নি ফিরে আয়, কেউ বলে নি চলে যা, তবু ফিরে যেতে হয়, তবু চলে যেতে হয়, ভুলে যেতে হয় কিছু কথা। না চাইতেই বন্ধ হয়ে যায় কিছু পথের চলা, কিছু অদৃশ্য খেলা, কারো কারো অমাবস্যা আর কাটে না, কারো পৃথিবী চলে যায় আঁধারের উদরে, যা কেউ দেখেনি, কেউ জানেনি, কেউ কোনদিন বুঝেনা।

ভুলে থাকা বুঝি খুব সহজ দাদা?
এইযে! দিনের পর দিন, মাস- বছর -সন্ধ্যা -ভোর চলে গ্যালো!
একবার ও তোমার প্রেম রেখে আমার ঘরে এলে না!
শুনেছি বেশ্যাদের ও ভালোবাসবার অধিকার আছে!
কবিত্ব বিকোয় চার আনা দরে!
আমার শাড়ির কুচি তো তারচেও কমে খোলে দেবু দা!
শুনেছি তুমি ঘরের গীতা আর কবিতা একসাথে বেচে দিয়েছো।..
কই! বাজারের মেয়ে হয়েও বাজারে তোমার কবিতার ভাঁজে আমার শরীর পেলাম না!
কে-গো? কে আছে তোমার গীতা কোরআন কবিতায়?
শুনেছি তুমি সওদা করো, দুটো আয়াতে একটা কবিতা!
আমি তোমায় আমার সারারাত দেবো, আমায় একটা তুমি সমেত ছন্দ দেবে?
ঈশ্বর! অন্য পুরুষে যখন চায় আমার দিকে! যখন দেখে পিঠ! কোমর!
তোমার বুকে জ্বলে না?
আপনি কি জানেন? কতোটা প্রেমে খোলে প্রেমিকার শাড়ির কুঁচি?
আপনি কি জানেন? কতোটা ভালোবাসায় দেখা মেলে জীবন্ত স্বর্গের?
ঈশ্বর!
বায়না ধরুন একটা চুরুটের! যার মধ্যে থেকে আসে প্রেমিকের ভেজা শরীরের মিষ্টি গন্ধ!
আমি তখন আপনাকে উপেক্ষা করে বলবো, আমি নাস্তিক আপনার চাওয়ায়! প্রেমিক আমার! তার শরীর টাও!
হেম,
বিষাক্ত সাপের মতো আমার রক্তে তোমাকে পাবার বাসনা। আর মাঝে মাঝে আকাশে হলুদ রঙের অদ্ভুত চাঁদ ওঠে, চঞ্চল বসন্ত কাঁপে গাছের পাতায়, আর অন্ধকারে লাল কাঁকরের পথ পড়ে থাকে অলস স্বপ্নের মতো। সমস্ত দিন, আর সমস্ত রাত্রি ভরে তোমাকে পাবার বাসনা বিষাক্ত সাপের মতো।
কিন্তু,
তোমার ব্যস্ততা, আমার শূন্যতা- চারিদিকে তোমার সুখের নিয়ন আলো, আমার দুঃখ গুলো মৃত্যুঞ্জয়ী, বড্ড ভালবাসে আমায়। তোমার চারপাশ আলোকিত, জ্যোৎস্না নাকি ল্যাম্পপোস্টের আলো?? যাই হোক না কেন তবু তুমি আলোকিত, তুমি দিনেও দেখতে পাও, আবার রাতেও। আঁধার কি দেখেছো কোনদিন?? না দেখলে এসো একবার, দেখে যেও কারো জীবনে দিন মানেও আঁধার। তোমার রাত হয় না, তবু তোমার আছে জ্যোৎস্না আলো বিলায়, জোনাক এসে আঁধার কাটায়, আমার ঘোর কাটে না ভোরের আলোয়ও, স্মৃতিরা হেঁটে যায় আমার পাশ দিয়ে, ওরা আমায় ওদের দলে ভিড়ায়, ভোর হয় চলে যায়, ওরা হারিয়ে যায়, আমি আবার এগিয়ে যাই তোমার দিকে, তারপর দুচোখে আবার তোমার ব্যস্ততা আর আমার শূন্যতা।

শুনুন! আমি জানি আপনি আমাতেই ভালো থাকবেন!
না, অহঙ্কার নয়! প্রেম!
নাহয় সে জড়ায় গভীর আবেগে,
নাহয় সে চুমুতে সাড়া খোঁজে সন্তাপে,
নাহয় তার পিঠ, কোমর শ্বেতাভ বড়!
আমি বাপু কালো! আমার অতো আবেগ নেইকো!
তবে আমার চুমুতে আপনার শিহরণ আমি ঠিক টের পাই!
আমার কালো দেহেই আপনি মিশবেন রক্তের মতো, ঘামের মতো!
নাহয় তার শাড়ির আচলে থাকে বেলীফুলের গন্ধ!
আর আমার পুরোটা জুড়ে আপনার!
নাহয় তার খোপায় থাকে দোলনচাঁপা!
আমার খোপায় মরে যায় কদম!
নাহয় তার অনামিকায় আপনার দেয়া অলঙ্কার!
আমার পুরোটা জুড়ে আপনার অবসাদ!
আমি ভালো আছি কিংবা নেই ঠাকুর!
আপনাকে ভালো আমিই রাখতে জানি!
হেম,
খুব ভরসার কোন জায়গায় প্রতারণার গন্ধ পেলে; আমার ক্ষুধা লাগার মতন অনুভূতি হয়। মনে হয় বহুকাল অভুক্ত আছি। গা গুলায়। ইচ্ছে হয়- গলায় আঙুল দিয়ে বমি করে হালকা হই। জীবন খুব তুচ্ছ তুচ্ছ কারনে বদলে যায়।

প্রিয় অভিমান, দুরত্বে কি তোমাকে মানায়?
ভূলে?
আমি আকাশ হয়ে যাই। তাকিয়ে থাকো, পূজো দাও, মেঘ আসুক, বৃষ্টি হোক।
তুমি পুণ্য হও!
তুমি পাপ হও।
তারপর একদিন-
সব সেরে যাবে, সব ব্যাস্ততা কাটিয়ে উঠে দ্যাখা হবে আমাদের।
এইযে চোখের সামনে ধুলোপড়া বইয়ের তাক,
জানালা বেয়ে উঠতে থাকা ভুল গাছ,
এইযে জানালার বিপরীতেই শ্যাওলা পড়া পিচ্ছিল দেয়াল,
সব সেরে উঠবে।
তাকের বই ঝেড়ে ফেলে চকচক করবে তোমার দেয়া "তেঁতুল বনে জোৎস্না",
ঠিক পাশেই থাকবে অবহেলা থেকে সদ্য তুলে আনা মানিপ্ল্যান্ট।
বোতলভর্তি সুখ আর অযত্নে পড়ে থাকা গ্লাস৷
এখন যখন বৃষ্টি পড়ে, তখন ও পড়বে। মুষলধারে।
বাতাসের রঙ আর বাদামী না হয়ে হবে তোমার চোখ'রঙা।
আমি বাতাসেও তাকাবো!
ইলেক্ট্রিক তারের উপরে ঝুলে থাকা শালিক, বোকাপাখি!
তাকিয়ে থাকা, কত নিষ্ঠুর তুমি আমি!
আবার দেখা হবে।
এবার ও'চোখ, এ'চোখে তাকালেই বুঝে ফেলবো।
" কত্তদিন কথা হয়নি,না?"
যুগ পার হয়ে যায়, আমাদের "প্রথম" দেখাটাও হলোনা!
এত কাব্য পারিনে!
এইযে মেঘের ডাকাডাকি, এইযে আমার পিছুটান, এইযে তুমি কত মায়া!
ধুলো মাখা খাম, শার্টের বোতাম, অবহেলা!
আমি যদি পারতাম!
এইযে-ছুঁয়ে ছুঁয়ে থাকতাম!
ধুলোয় যখন আমি মিশি,
তখন শুধু আমিই মিশি ঠাকুর!
ধুলোয় যখন আপনার পা,
তখন ও আমি হই অশূচি, অচ্ছুৎ!
কথা ছিলো আকূলতা বাড়লেই আপনি ফিরবেন!
শতাব্দী যে কেটে গ্যালো!
ঘরে বুঝি সময় ঘড়ি নেই ঠাকুর!
বয়ে চলা স্রোত, ভাঙনে ভালোবাসা, আঁধারে ছুঁতে চাওয়া, আলোতে গহীন, ভুলে বোধ, হাসিতে প্রাণসুধা, প্রণামে মঙ্গল, অস্বীকারে দিশেহারা, আপ্নিতে আমি।
চোখ বুজুন, কাছে আসুন
আরো কাছে, নিশ্বাস!
কোমরে রাখুন হাত!
চুইয়ে পড়ছে প্রেম!
বুঝতে পারেন!
ব্লাউজের হুক পেছন টায়!
হাত দিন, ভয়!
অন্তর্বাসে বিচরণ!
ঠোট কাটুক, প্রেমে।
চুমু হোক আরো গভীর!
আমায় মিশতে দিন!
আপনি সর্বাঙ্গে মিশুন ঘামের মতোন!
আমি আলো খুঁজি!
আপনি আঁধার সরান!
আমার শরীরে গীতাপাঠ করুন, তিলাওয়াত হোক কোরআন!
আমি ভাঙছি! চুরমার!
আপনি গড়ে দিন!
ভুল বুঝলেন ঠাকুর?!
আমি সন্তাপ, আমি লজ্জা।
আপনি প্রেম, ধ্বংস!
আপনি আমি, আমি যার, আপনি আমার!
আচ্ছা ঠাকুর, আমার যখন কান্না পায়, তখন তুমি ক্যামন থাকো?

হেম,
আমি মাতাল মৌমাছি- প্রেমের গন্ধ শুঁকতে শুঁকতে প্রেমিকার কাছে আসি ।
ক'টা যোনিপথ পাড়ি দিয়ে আমার কাছে এলে ?
মুহূর্তে গলা চেপে ধরি সর্বশক্তি দিয়ে,
ঠোঁটে ঠোঁট দেয়ার আগে বলি-
" মাতাল হতেই পারি অসভ্য স্বভাবে তবু যার তার হয়ে যাইনি তোমার অভাবে"
হেম,
সময় করে একদিন প্রেমিকা হইও। ব্যস্ততা শেষে ভালোবেসে পাশে বসো। সময় করে একদিন প্রেমিকা হইও, চোখের কাজল কেনো ধুঁয়ে যায় কারন খুঁজো। সময় করে একদিন প্রেমিকা হইও, বুকের বাঁ পাশের জমিনে মায়ার সুপ্ত চারা লাগিও। সময় করে একদিন প্রেমিকা হইও, রোজ রাতে যে ছেলেটি অভিমানে তোমায় পত্র লিখে, তাকে দুলাইনে উত্তর দিও। সময় করে একদিন প্রেমিকা হইও, তপ্ত রোদে পুড়ে লেলুয়া বাতাসে মন ভাসিও। সময় করে একদিন প্রেমিকা হইও, অভিমানি বালকের মান ভাঙাতে, তাহার দুটি হাতে হাত রাখিও। সময় করে একদিন প্রেমিকা হইও, জোছনা রাতে সেলফোনে সাথি হয়ে, ছেলেটির সাথে চাঁদনি বিলাসে মাতাল হইও। সময় করে একদিন প্রেমিকা হইও, খুব করে যে বুকের মাঝে তোমায় ছুঁয়ে থাকে, তাকে ভালোবেসে কিছু পাগলামি করো। সময় করে একদিন প্রেমিকা হইও, অনুভবের গল্প কথায়, তাকেই ভালোবেসো।